এএফপির সাংবাদিক গ্রেপ্তার করে তুমুল বিতর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট

এএফপির সাংবাদিক গ্রেপ্তার করে তুমুল বিতর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ বুধবার (২৬ মার্চ) সপ্তম দিনে পড়েছে। গত মঙ্গলবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন অন্তত ৭ জন সাংবাদিক। তার মধ্যে এএফপির চিত্র সাংবাদিকও আছেন। এই ঘটনায় বিতর্ক আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে আটক ১ হাজার ৪০০ জন বিক্ষোভকারী।

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোলুকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই গোটা দেশজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়েছে। এক দশক পর এমন আন্দোলন দেখছে তুরস্ক। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেয়ার পরেও আন্দোলনকারীদের দমানো যাচ্ছে না। মঙ্গলবার আন্দোলন থামাতে পুলিশ বিরাট অভিযান চালায়। সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।

সাংবাদিক গ্রেপ্তার

এএফপি-র চিত্র সাংবাদিক ইয়াসিন আকগুল মঙ্গলবারের মিছিলের ছবি তুলতে গেছিলেন। প্রশাসনের অভিযোগ, ওই সাংবাদিক বেআইনি মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি ওই মিছিলের ছবি তুলতে গেছিলেন। মিছিলে যোগ দিতে যাননি।

ঘটনার পর এএফপি-র সিইও এবং চেয়ারম্যান ফেবরিস ফ্রাইস সরাসরি তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি দেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করছি, আপনি সরাসরি এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবেন এবং সাংবাদিককে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। এই গ্রেপ্তার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে মঙ্গলবার অন্তত এক হাজার বিক্ষোভকারী ইস্তাম্বুলের সিসলি অঞ্চলে পুরসভার দিকে মিছিল করেন। তাদের এখন একটাই দাবি, সরকার পদত্যাগ করুক। তাদের হাতের পোস্টার ব্যানারে লেখা ছিল, ‘তাইয়েপের পদত্যাগ চাই।’

এর্দোয়ানের হুমকি

মঙ্গলবারও চলতি বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান। তার বক্তব্য, ইমামোলুর গ্রেপ্তার নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে, তা ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক কারণে ইমামোলুকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি এখন আদালতের হাতে। এবং দেশের আদালত স্বাধীন বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট।

বিরোধী রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) বিরুদ্ধে এদিনও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। এর্দোয়ানের অভিযোগ, সিএইচপি মানুষকে উসকানি দিচ্ছে। উল্লেখ্য, সিএইচপি-র নেতা ইমামোলু। ২০২৮ সালের নির্বাচনে তিনি এর্দোয়ানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। সিএইচপি ইতিমধ্যেই তাকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এর্দোয়ান এদিন বলেছেন, রাস্তায় যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে, তাদের আন্দোলন কোথাও পৌঁছাবে না। তারা কানাগলিতে ঢুকে পড়েছে। বস্তুত, তুরস্কের রাস্তায় মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরও বড় আন্দোলনের ডাক

এদিকে এর্দোয়ানের হুমকির মুখে দমছেন না আন্দোলনকারীরা। বুধবার আরো বড় জমায়েতের ডাক দেয়া হয়েছে। সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল সিলভরি কারাগারে ইমামোলুর সঙ্গে দেখা করতে গেছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইমামোলু সুস্থ আছেন, মাথা নিচু করেননি। পরিবার, সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

এদিন ইমামোলুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর ওজগুর জানিয়েছেন, দলের তরফ থেকে ইস্তাম্বুল পুরসভায় একজন নতুন মেয়র নিয়োগ করা হবে। ইমামোলুর পরিবর্ত হিসেবে যিনি আপাতত কাজ করবেন। এর্দোয়ান যে বিকল্প মেয়র নিয়োগ করেছেন, তা তারা মানছেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে দিয়েছেন ওজগুর।

শনিবার ইস্তাম্বুলে গণমিছিলের ডাক দিয়েছেন তিনি। সমস্ত পেশার মানুষকে ওই মিছিলে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের জমায়েতে গিয়ে ওজগুর বলেছেন, ইমামোলুর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে, স্বচ্ছ বিচারের দাবিতে, দ্রুত নির্বাচনের ডাক দিতে এই মিছিলের আয়োজন হচ্ছে। সকলে এই আন্দোলনে যোগ দিন।

সূত্র: ডয়চে ভেলে (ডিডব্লিউ)।

Scroll to Top