রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা হ্রাসের সংকট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান | চ্যানেল আই অনলাইন

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা হ্রাসের সংকট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান | চ্যানেল আই অনলাইন

জরুরিভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পেলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য রেশন মাথাপিছু মাসিক ১২.৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে- বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এমন বার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক- খানি বাংলাদেশ।

শনিবার (১৫ মার্চ) এক সংবাদবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পৃথিবীজুড়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দূরীকরণে কর্মরত জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুল্ড প্রোগ্রাম বা বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানায়, তহবিলের তীব্র সংকটের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এই সংকটময় সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর বাংলাদেশে সফরকালে প্রকাশিত এই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় খানি বাংলাদেশ।

বিবৃতিতে বলা হয় তহবিল ঘাটতি মোকাবেলা করতে, প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পুনরায় চালু করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য রেশন কমানোর এই পদক্ষেপটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট তৈরি করতে পারে এবং এই জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণের এই অপরিহার্য সহায়তা ক্ষুন্ন হবে। এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন শরণার্থীরা ইতিমধ্যেই একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন, এবং তহবিলের ঘাটতি ক্রমবর্ধমান।

বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গারা জনাকীর্ণ শিবিরে বসবাস করছেন, যেখানে তাদের কাজ করার বা তার বাইরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার আইনি অধিকার নেই। তারা সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল, যার কারণে এই সহায়তা বজায় রাখা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন অপুষ্টি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০১৭ এর পর ২০২৫ সালে এসে ক্যাম্পগুলোতে সর্বোচ্চ অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার ১৫% ছাড়িয়ে গেছে, এবং গুরুতর তীব্র পুষ্টিহীনতার ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, এর পর ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৭% বেড়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য রেশন পূর্ণভাবে বজায় রাখার জন্য এপ্রিল মাসে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ৮১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। খানি বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জরুরিভাবে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রদানের আহবান জানায়, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায়।

খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে যতদিন না তারা এই শিবিরে আছেন। যদি এমন পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিবিরে পাচার, গ্রেফতার বা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় জীবনহানির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে, যা ক্যাম্পের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, যথাযথ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নেয়ার সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের রাখান রাজ্যে ২০১৭ এর আগস্ট মাসে জান্তা সরকার ও রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষ চরমে উঠলে লাখো রোহিঙ্গা নাফ নাদ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

Scroll to Top