যুক্তরাষ্ট্রে একটি ভালো জীবনের আশায় যাওয়া ১০৪ জন ভারতীয় অভিবাসী সম্প্রতি তাদের দেশে ফেরত এসেছেন কিন্তু তছনছ হয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে তাদের অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টার পরিণতি ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ (৬ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ১০৪ জন অভিবাসী নিয়ে একটি মার্কিন সেনা বিমান বুধবার ভারতের অমৃতসরে অবতরণ করে। তাদের মধ্যে ৩৩ জন হরিয়ানা, ৩৩ জন গুজরাট, ৩০ জন পাঞ্জাব এবং বাকিরা অন্যান্য রাজ্য থেকে ছিলেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এই অভিবাসীরা প্রধানত ভারতের পাঞ্জাব, গুজরাট, হরিয়ানা এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আর এই যাত্রাই তাদের জন্য এক পরিপূর্ণ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
দালালকে ৪২ লাখ রুপি দিয়েছিলেন হারভিন্দর সিং
ভারতের পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার তাহলি গ্রাম থেকে আসা হারভিন্দর সিং বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ভিসার জন্য একজন দালালকে ৪২ লাখ রুপি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাকে জানানো হয়, ভিসা পাওয়া যায়নি এবং তাকে পরে কিছু দিন দিল্লি থেকে কাতার, তারপর ব্রাজিল পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লাইটে পাঠানো হয়।
![GOVT](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/09/GOVT.jpg?fit=300%2C300&quality=100&ssl=1)
তিনি বলেন, ব্রাজিলে গিয়ে বলা হয়, আমাকে পেরু থেকে একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হবে, কিন্তু সেই ফ্লাইটের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তারপর ট্যাক্সিতে আমাদের কলম্বিয়া এবং তারপর পানামার সীমান্তে পৌঁছানো হয়। সেখান থেকে আমাদের একটি জাহাজে চড়তে বলা হয়, কিন্তু সেখানে কোনো জাহাজও ছিল না। তারপরই আমাদের পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু হয়।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
এই ভয়াবহ যাত্রায়, তারা পরপর দু’দিন পাহাড়ি পথ পাড়ি দেন এবং পরে একটি ছোট নৌকায় করে সমুদ্রে চলে যান, যেখানে চার ঘণ্টার নৌযাত্রায় তাদের নৌকা ডুবে যায় এবং একজন মারা যান। পানামার জঙ্গলে আরেকজনের মৃত্যু হয়। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তারা অত্যন্ত কম খাবারে টিকে ছিলেন।
সুখপাল সিং ১৫ ঘণ্টা সমুদ্রে যাত্রা
পাঞ্জাবের দারাপুর গ্রামের সুখপাল সিংও একই ধরনের যাত্রা করেছিলেন, ১৫ ঘণ্টা সমুদ্রে যাত্রা করার পর, তিনি ৪০-৪৫ কিলোমিটার পাহাড়ি অঞ্চলে হাঁটেন, যেখানে গভীর খাদ ছিল। তিনি বলেন, যদি কেউ আহত হত, তাকে মরতে ছেড়ে দেয়া হত। আমরা পথে অনেক মৃতদেহ দেখেছি। এরপর, মেক্সিকোতে যাওয়ার আগে গ্রেফতার করা হয়। আমরা ১৪ দিন অন্ধকারে বন্দী ছিলাম, সূর্য দেখিনি।
অত্যাচার ও আর্থিক সংকট
আরেক অভিবাসী জসপাল সিং জানান, তাদের হাত ও পা বেঁধে রাখা হয়েছিল পুরো যাত্রা জুড়ে। তারা শুধু অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণের পরেই মুক্তি পায়।
এই অভিবাসীদের পরিবারগুলো বর্তমানে বিশাল আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, কারণ তারা বেআইনি অভিবাসনের জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিলেন।
হারভিন্দর সিংয়ের স্ত্রী কুলজিন্দর কৌর জানান, আমরা যা কিছু ছিল তা বিক্রি করেছি। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়েছি, যেন ভালো জীবনের জন্য তাকে বিদেশ পাঠাতে পারি। কিন্তু এখন আমার স্বামী ফিরে এসেছেন, আর আমরা বড় ঋণের বোঝা নিয়ে পড়ে আছি।
ঘটনাটি এই মুহূর্তে পাঞ্জাবের ‘এনআরআই বেল্ট’ (জালন্ধর, হোশিয়ারপুর, কাপুরথালা, নবানশহর) অঞ্চলের একটি বড় সমস্যা তুলে ধরছে, যেখানে অনেক পরিবার বেআইনি দালালের ওপর নির্ভর করে বিদেশ যাওয়ার আশা করে থাকে। এখন অনেক পরিবার এই দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করছে।