অধ্যাপক ইউনূস ১২ বছরের এক বালকের মায়ের কাছে লেখা তার শেষ চিঠির কথা উল্লেখ করেছেন। ‘মা, আমি জানি তুমি চাও না আমি মিছিলে যাই। কিন্তু দেখো, আমার সব বন্ধুরা মিছিলে। তাদের কেউ কেউ মারাও গেছে।…আমি ভিতু নই। আমিও তাদের জন্য দেশের জন্য লড়তে চাই। আমি যাচ্ছি, মা, আমাকে দোয়া কোরো। যদি আর ফিরে না আসি, যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।’
সেই ছেলে মিছিলে গিয়েছিল, আর ফিরে আসেনি।
অধ্যাপক ইউনূসের মুখে এই গল্প আবার শুনে আমি চোখের জল আটকাতে পারিনি। তিনি বিদেশি সাংবাদিককে সাহসের গল্প বলছিলেন, বীরত্বের গল্প বলছিলেন, তার চেয়েও বড় কথা এক স্বপ্নগাথার বিবরণ দিচ্ছিলেন।
ছোট–বড় সব বিপ্লবের এক বা একাধিক বয়ানকারী থাকে। গিডিয়নের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকারটি শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব গণজাগরণ, তার সেরা ত্রুবাদুর তিনি। সেই গণজাগরণের গল্পটি এখনো পুরোপুরি লেখা হয়নি। যখন লেখা হবে, অধ্যাপক ইউনূসের কণ্ঠস্বরটি তাতে নির্ঘাত স্থান পাবে।
দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকে এই বিপ্লবের সম্ভাবনা ও সাফল্য নিয়ে এখনো সন্দিহান। এমন লোকেরও অভাব নেই, যাঁরা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের প্রত্যাবর্তনের জন্য দিন গুনছেন। সেই সব লোকের কাছে এই কথা পৌঁছে দেওয়া খুব জরুরি যে ঠিক কেমন বাংলাদেশ আমরা চাই। আর তা বিনির্মাণের দায়িত্ব আমাদের। অন্য কেউ তা আমাদের জন্য নির্মাণ করে দেবে না। স্বৈরাচারের প্রস্থান আমাদের তেমন একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তুলে দিয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য, অধ্যাপক ইউনূস সেই নির্মাণকাজে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছেন।