দাবি আদায়ের ‘অস্ত্র’ রাজধানীর সড়ক, দুর্ভোগ নগরবাসীর – DesheBideshe

দাবি আদায়ের ‘অস্ত্র’ রাজধানীর সড়ক, দুর্ভোগ নগরবাসীর – DesheBideshe

দাবি আদায়ের ‘অস্ত্র’ রাজধানীর সড়ক, দুর্ভোগ নগরবাসীর – DesheBideshe

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি – ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দাবি আদায়ের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে দাবি আদায়ের আন্দোলন। সেই আন্দোলনে রাজধানীতে যানজট লেগেই থাকছে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

কারণ দাবি আদায়ে সবাই রাজপথকেই বেছে নিচ্ছেন।

তবে সম্প্রতি রাজধানীতে হওয়া সব আন্দোলন যে অযৌক্তিক তাও বলা যাবে না। তবে কিছু আন্দোলন রাজপথে না করে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে নতুন ইস্যুতে অনেকেই মাঠে নামার সুযোগ পাবে।

তাই রাজপথে নামার আগেই দাবি যৌক্তিক ও বিবেচনা সম্ভব হলে তা সমাধান করতে হবে। নয়তো এই প্রবণতা বাড়তেই থাকবে।
জানা গেছে, চলতি মাসে ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকেরা। তারা প্রথমদিকে প্রেসক্লাবের সামনে এবং পরে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করতে থাকেন।

রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করায় ওই রাস্তায় জনদুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। দাবি আদায় না হওয়ায় তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে। পরে বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। তার পরেই ইবতেদায়ি শিক্ষকদের দাবি মেনে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তারপর তারা রাস্তা ছেড়ে দেন।

এদিকে মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন রেলের রানিং স্টাফরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেও তারা সফল হননি। তবে হঠাৎ তারা ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে কঠোর অবস্থানে যান। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। সারাদেশে একযোগে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় নানা সমালোচনা তৈরি হয়। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি সমাধান করার জন্য কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পুরো একদিন রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর তাদের দাবি মেনে নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এই দুই আন্দোলনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের এক বক্তব্য ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবি অধিভুক্ত থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন। এই সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান দিয়েছেন। এ ছাড়াও কিছুদিন আগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রাজপথে নামেন। তারাও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান। সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে তাদের দাবিও মেনে নেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। এর মাঝে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এসব আন্দোলনের মতো আজও (৩০ জানুয়ারি) কয়েকটি দাবি নিয়ে রাজধানীতে আন্দোলন চলছে। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন। তাদের দাবি, কলেজটিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে স্বীকৃতি দেবে সরকার। সড়ক অবরোধ করায় ওই সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের পুনর্বহালের দাবিতে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা একটি পদযাত্রা বের করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তাদের পদযাত্রাটি সচিবালয়ে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে।

এভাবে প্রতিদিনই নতুন নতুন আন্দোলনে রাজধানীতে রাস্তা অবরোধ হচ্ছে। রাস্তা অবরোধ না করে বিকল্প স্থানে আন্দোলনের করার জন্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি শাহবাগে না দাঁড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্দোলন করার জন্য অনুরোধ করেন। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যে তেমন সাড়া দেননি আন্দোলনকারীরা।

রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এতদিন একপক্ষের লোকেরা সুবিধা নিয়েছে, তাই বঞ্চিতরা দাবি আদায়ে রাজপথে নামছেন। এই সময়টা কাজে লাগাতে পারলে হয়তো দাবি পূরণ সম্ভব তাই তারা রাজপথে নামছেন। তবে আন্দোলন করতে গিয়ে যাতে মানুষের জনদুর্ভোগ না হয় সেই দিকে সবার দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।

সূত্র: কালের কন্ঠ
এনএন/ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

 



Scroll to Top