এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
হারিস দেব বর্মা বলেন, কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলাম! গভীর অরণ্যে মানুষের পায়ের আওয়াজ শুনে আমার নিকোন ডিএসএলআর ৮০৪০০ ক্যামেরাকে প্রস্তুত করে নিই। সময় বিকেল পাঁচটা। নিজেকে আড়াল করে নিই বনে। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা পাই ভালুকটির, সর্বোচ্চ ১০/১২ সেকেন্ড ক্যামেরার সাটার টেপা বন্ধ করিনি। সে বুঝতে পেরে হুঙ্কার দিয়ে তাড়া করে আমাকে। দৌড়ে ছুটে আসি। তখন কালো বন্য ভালুকটিও গহীন অরণ্যে নিশ্চিন্তে চলে যায়।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর অরণ্যে ‘এশিয়াটিক ব্ল্যাক’ প্রজাতির একটি ভালুকের ছবিসহ প্রমাণ পাওয়া যায় হারিসের ছবি থেকেই। সত্যতা যাচাই করে বিরল এই প্রজাতির বন্য ভালুকটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয় বলে বনের ভেতরে পর্যটকসহ জনসাধারণের প্রবেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
প্রকৃতিপ্রেমী হারিস বলেন, ট্যুর গাইড হিসেবে আমিতো বনেই থাকি, আমারও উচিত জীব-বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা। সেই থেকে আমি ওয়াইল্ড লাইফ নিয়েই আছি।
তথ্য মতে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রঘুনন্দন পাহাড়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। এই উদ্যান ঘেঁষে আছে ৯টি চা-বাগান। উদ্যানের ভেতরে টিপরা পাড়ায় পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪টি পরিবার বসবাস করে। ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু ও ১৫০ থেকে ২০০ প্রজাতির পাখি আছে উদ্যানে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল বন্যপ্রাণীদের অভয়াশ্রম। বনের ভেতরে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছোবাঘ, মায়া হরিণও আছে।
হারিস দেব বর্মা বলেন, আমি বিরল প্রজাতির ভাল্লুকটি দেখে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এই বনে ওদের বসবাস আছে। পরে সেই ছবি প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দেখানোর পর নিশ্চিত হই যে, প্রাণীটি এশিয়াটিক কালো ভালুক।
বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এশিয়াটিক ব্ল্যাক জাতের এ ভালুক বিলুপ্তপ্রায়। এ প্রজাতির ভালুকের কালো পশম, একটি হালকা বাদামি মুখ ও বুকে একটি স্বতন্ত্র সাদা বা ক্রিমি প্যাঁচ থাকে, যা কখনো কখনো ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ভালুকের ওজন ৬০ থেকে ২০০ কেজি। গড় ওজন ১৩৫ কেজি। এই প্রাণী পোকামাকড়, বিটল লার্ভা, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, মৌমাছি, ঘাস, ছাল, শিকড়, কন্দ, ফল ইত্যাদি খায়।
বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ জানান, হারিস দেব বর্মার মাধ্যমে আমরা প্রথম সাতছড়িতে এ ধরনের ভালুক থাকার বিষয়টি জানতে পারি। এর সংরক্ষণে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বনে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।