এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফিতে ৬৮ রানের ঝলমলে একটি ইনিংস বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লেখা থাকবে। সেদিন হল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কেবল ১৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেই অবস্থায় দলকে একাই সামলে খাদ থেকে টেনে তুলেছিলেন অধিনায়ক আকরাম খান। তার নির্ভরতায় ভর করে জয়ের বন্দরে নোঙর করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেদিন আকরামের ব্যাটে জ্বলা অবিস্মরণীয় ইনিংসটি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আজ এতদূর এগোতে মজবুত ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। তার নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা ঘরে তুলেছিল টিম টাইগার্স। সেই পথিকৃৎ, টাইগার ক্রিকেটের মেগাস্টার, কিংবদন্তি আকরাম খানের জন্মদিন আজ।
১ নভেম্বর, ১৯৬৮ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারে জন্ম ৫৬ বর্ষী কিংবদন্তির। ক্রিকেটীয় পরিবারে জন্ম নেয়া মুহাম্মদ আকরাম হুসেইন খান ছিলেন একজন পেস বোলিং-অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের দুই উদ্বোধনী তারকা ব্যাটার, তামিম ইকবাল ও সাবেক ওপেনার নাফিস ইকবালের চাচা তিনি।
১৯৮৮ সালে লিস্ট-এ ম্যাচ দিয়ে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা শুরু হয় আকরামের। ১৯৯৭ সালে খেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম প্রথমশ্রেণির ম্যাচটি। জাতীয় দল জার্সিতে কিংবদন্তির অভিষেক হয় ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে।
নিজ শহর চট্টগ্রামে, ১৯৮৮ সালের ২৯ অক্টোবর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয় আকরাম খানের। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৩৫ বলে ২১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। বল হাতে ৫ ওভারে ২৮ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থাকেন। ম্যাচে ১৭৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।
১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে সেবছরই অধিনায়কের দায়িত্ব পান আকরাম খান। ১৯৯৭ সালে কুয়ালালামপুরে গড়ানো আইসিসি ট্রফিতে নেতৃত্ব দেন মারকুটে সাবেক ব্যাটার। তার অধীনে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। পাশাপাশি ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টিম টাইগার্স। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় ১৯৯৮ সালে, সেই ম্যাচেও অধিনায়ক ছিলেন আকরাম। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ১৫টি সীমিত ওভারের ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৯ সালে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নিয়ে পরাক্রমশালী পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন আকরাম খান- খালেদ মাহমুদ সুজনরা। পরের বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট পা রাখে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টের আঙিনায়।
টেস্টে বাংলাদেশের অভিষেক হয় ২০০০ সালের নভেম্বরের ১০ তারিখে, ঢাকায়। অভিষিক্ত ম্যাচেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আকরাম। প্রথম ইনিংসে পাঁচে ব্যাটে নেমে ৩৫ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য আলো ছড়াতে পারেননি। আউট হয়েছেন দু-রানে।
১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন জাতীয় দল জার্সিতে। ২০০৩ সালের এপ্রিলে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে খেলেন। একই সিরিজে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টও খেলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
প্রায় ৫ বছরের ক্যারিয়ারে ৮টি টেস্ট ও ৪৪টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আকরাম। সাদা বলের ক্রিকেটে ৪৪ ম্যাচে ৯৭৬ রান করেছেন। ফিফটি ৫টি। সর্বোচ্চ রান ৬৫। টেস্টে ৮ ম্যাচে ১৬ ইনিংসে ব্যাট করে ২৫৯ রান করেন। তার ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ স্কোর এসেছিল ৪৪।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ৪৩টি ম্যাচ খেলে ২টি সেঞ্চুরি ও ১০টি ফিফটিতে ২,১১৭ রান করেন। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ১২৯ রানের। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৯৫ ম্যাচ খেলে ২,১৯২ রান করেন। ছিল ১২টি ফিফটি। সর্বোচ্চ ৮২ রানের ইনিংস খেলেন। সবধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে বল হাতে তার উইকেটের সংখ্যা ১টি। সবশেষ ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম ডিভিশনের হয়ে বরিশাল ডিভিশনের বিপক্ষে শেষ ঘরোয়া ম্যাচটি খেলেন।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর প্রধান নির্বাচকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০১২ সালের মার্চে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আকরাম। তিনদিন পর অবশ্য পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক পদে নির্বাচন করতে এই সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে বিসিবির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন কর চলেছেন লাল-সবুজের ক্রিকেট দলের কিংবদন্তি আকরাম খান।