কক্সবাজার, ১৩ অক্টোবর – কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব কেন্দ্র করে সনাতনীদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মিলে লাখো মানুষের উপস্থিতি ঘটেছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। একে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন বলে উল্লেখ করেছেন উপস্থিত লোকজন।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে প্রতিমা বিসর্জনকে করে পর্যটকসহ প্রায় তিন লাখ মানুষের উপস্থিতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম।
আয়োজকরা জানান, প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার বিসর্জন উপলক্ষে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের মিলন ঘটে। এবছরও অন্তত তিন লাখ মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে সৈকতের বেলাভূমি। শুধু লাবণী পয়েন্টেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা অন্তত ২০০ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা জানান, দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চের সামনে আনা হয় প্রতিমা। আড়াইটা থেকে শুরু হয় বিজয়া সম্মেলন।
এসময় উদয় শংকর পাল মিঠুর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামিম আরা স্বপ্না, পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ, ট্যুুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা সরোয়ার কামাল, গোলাম ফারুক খান কায়সার, সদর ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সাগরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পূজা ও বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন আগের মতো কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে। বাড়তি নিরাপত্তায় ছিল সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল বলেন, জেলার ৯টি উপজেলায় ৩২১টি মণ্ডপে সুষ্ঠু পরিবেশে পূজা সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ১৫১টি প্রতিমা ও ১৭০টি ঘটপূজা। দেশের সর্ববৃহৎ সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এবারও আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য স্থান।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, রামু থেকে কড়া নিরাপত্তায় নাইক্ষ্যংছড়িসহ সাতটি জায়গা থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো বাঁকখালী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ পর্যটক ও দর্শনার্থী এসেছেন। ছুটির টানা চারদিন পর্যটকে সরগরম রয়েছে সৈকত এলাকা। আগতদের নিরাপত্তায় আমাদের কট্রোল রুম চালু ছিল। আমাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।
ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যানজট নিরসনে শহরের বাইরের উপজেলাগুলোর পূজামণ্ডপের প্রতিমা কলাতলী ডলফিন মোড় হয়ে এবং শহরের অভ্যন্তরের প্রতিমাগুলো প্রধান সড়কের হলিডে মোড় হয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের বিসর্জনস্থলে নিয়ে আসা হয়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, আবহমান কাল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। প্রতিমা বিসর্জনে লাবণী পয়েন্ট আজকের দৃশ্য সেটা আবারও প্রমাণ করলো।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, অতীতের মতো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব হয়েছে সৈকতে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এ উৎসব সম্পন্ন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৩ অক্টোবর ২০২৪