ভক্তদের চারদিন আনন্দ-উল্লাসে মাতিয়ে মর্ত্যরে ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন দেবী দুর্গা।
রোববার (১২ অক্টোবর) ফেনী শহরতলীর কালিপালে বিজয়া দশমী ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এবার জেলায় সর্বমোট ১৪৬টি প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, এ বছর দেবী দোলায় এসে ঘোটকে করে কৈলাসে ফিরে গেলেন। দেবীর আগমন ও প্রত্যাগমন ঘিরে ভক্তদের উৎসাহ আর আনন্দের কমতি ছিলনা গত কয়েকদিন। তবে বিদায়ের দিন ভক্তদের মনে ছিল বিষাদের সুর আর চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। তাদের বিশ্বাস প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এ ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে উৎসব।
আজ বিজয়া দশমীর দিন সকাল হতে মন্ডপে মন্ডপে দেবীর মুখে পান পাতা আর সিঁদুর ছুঁইয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে শুরু হয় বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুর ২ টা হতে কালিপালের দশমী ঘাটে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বিসর্জন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুপুর হতে ট্রাক ও পিকআপে করে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানাতে দলে দলে জড়ো হন ভক্ত ও অনুসারীরা। প্রতিমা ঘাটে নেবার পর ভক্তরা ধুপ-ধুনো দিয়ে আরতি করেন। এরপর পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে শুরু হয় বিসর্জনের পালা। জেলা শহরের ন্যায় উপজেলাগুলোতেও শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
দুর্গা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত ছিল র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য।বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেম পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, সেনাবাহিনীর ফেনী ক্যাম্প কমান্ডার লে.কর্ণেল কামরুল হাসান ও পৌরসভা প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্য জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ফেনী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়া ফেনীতে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।আমাদের যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সেটি ধরে রাখতে হবে। এতদিনের যে কর্মযজ্ঞ ছিল সেটি সফল ভাবে শেষ হয়েছে। ফেনী আবার দেখিয়ে দিয়েছে সফলভাবে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়া পূজা কিভাবে শেষ করা যায়।
পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ছিল পূজাকে কেন্দ্র করে।ফেনীর শারদীয় দুর্গোৎসব ঝাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর পরীবর্তীত পরিস্থিতিতে অনেকে মনে করেছিল ফেনীতে সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন হবেনা৷ তবে আমরা প্রশাসনিক ভাবে আশ্বাস দিয়েছিলাম ফেনীতে কোন সমস্যা হবেনা। তার ধারাবাহিকতায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ও ছাত্রদের সহযোগিতায় কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই পূজা উদযাপিত হয়েছে।
ফেনী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হীরা লাল চক্রবর্তী বলেন, আনন্দঘন পরিবেশে সকলের অংশগ্রহণে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ব্যাতীত এবারের পূজা শেষ হয়েছে। এসময় তিনি সুন্দরভাবে পূজা আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান।
ফেনীর গুরুচক্র মন্দিরের পুরহিত সুভাষ চক্রবর্তী জানান, এবার মা দোলায় করে এসেছলিনে। কৈলাসে ফিরে গেছেন ঘোটকে করে। দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলের জন্য আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি যাতে দেশ ভালো থাকে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহা নবমী শেষে আজকে বিজয়া দশমীর দিনে সকালে মায়ের বিদায় লগ্নের আগে পূজা করেছি। মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে উলু দিয়ে, পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে আমরা মাকে বিদায় জানিয়েছি।
সনাতনী ভক্তরা জানান, সব কষ্ট দূর করে দেবী দুর্গা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। এক বছর পর মা আবার আসবেন। আমরা মায়ের কাছে দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে প্রার্থনা করেছি। তিনি যেন সকলের উন্নতি আর প্রগতিতে আমাদের জীবন ভরিয়ে দেন। পৃথিবীতে যেন শান্তি ফিরে আসে। সেই সাথে সকলের মঙ্গল কামনা দেবী দুর্গার নিকট দোয়া কামনা করেন ভক্তরা।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এক বছর পর নতুন শরতে আবার দেবী আসবেন ‘পিতৃগৃহ’ এই ধরণীতে। বিসর্জনকালে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, পুলিশ, র্যাব, আনসার,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উপস্থিত ছিলেন।