আর একটি রাত পেরলেই ভারতে পর্দা উঠছে ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের। মোট ৪৮ ম্যাচ দেশটির ১০ রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন শহরের ১০ স্টেডিয়ামে হবে। প্রথম সেমিফাইনাল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে, দ্বিতীয়টি হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে। উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনাল হবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে।
এবারের আসরের স্টেডিয়ামগুলো কোন শহরে অবস্থিত, ধারণক্ষমতা কত, মাঠের আয়তন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্কোর কত, মাঠগুলোতে ২০১৬ সালের পর থেকে কতগুলো ওয়ানডে খেলা হয়েছে, সেসব জেনে নেয়া যাক।
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ
ভারতের গুজরাটের জনপ্রিয় শহরের তালিকায় প্রথমেই আহমেদাবাদ। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী এবং ফাইনাল ম্যাচ হবে এ শহরের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। দর্শক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩২ হাজার। মাঠে বাউন্ডারির আয়তন সোজাসুজি গড়ে ৭৫ মিটার এবং আড়াআড়ি ৬০-৬৫ মিটার। স্টেডিয়ামে পিচের সংখ্যা ১১টি।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও ফাইনাল খেলা হবে, তবে ২০১৬ সালের পর এ মাঠে ওয়ানডে খেলা হয়েছে মাত্র ৩টি। প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ২২৬ রান এবং পরে ব্যাট করে জেতা দলের সর্বোচ্চ রান ১৭৬। প্রথমে ব্যাট করে জেতা দলের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ এবং পরে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ। মাঠটিতে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের উইকেট নেয়া ও গড়ে সাফল্য বেশি। স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের ইকোনোমি ভালো।
অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, দিল্লি
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম। পূর্বনাম ফিরোজ শাহ কোটলা, স্টেডিয়ামটিতে বাংলাদেশের ম্যাচ রয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৭,৫০০। মাঠের বাউন্ডারির আয়তন সোজাসুজি গড়ে ৬৮-৭০ মিটার এবং আড়াআড়ি ৬৫ মিটার। মাঠে পিচের সংখ্যা ৯টি।
২০১৬ সালের পর ওয়ানডে খেলা হয়েছে মাত্র ৩টি। প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ২০৪ এবং তাড়া করে জেতা দলের সর্বোচ্চ রান ৯৯। প্রথমে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ এবং পরে ব্যাট করে জেতা দলের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ। মাঠটিতে পেসার ও স্পিনারদের উইকেট নেয়ার সংখ্যা সমান হলেও গড়ে এগিয়ে স্পিনার। ইকোনোমি ভালো পেসারদের।
এইচপিসিএ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ধর্মশালা
ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী ধর্মশালা, শীত প্রধান এক অঞ্চল। এর অন্যতম প্রধান স্টেডিয়াম হল হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, যেখানে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচও এখানে। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা মাত্র ২৩ হাজার এবং পিচের সংখ্যা ৯টি। সোজাসুজি বাউন্ডারির গড় আয়তন ৬৮-৭০ মিটার এবং আড়াআড়ি ৬৩-৬৫ মিটার।
২০১৬ সালের পর এখানে খেলা হয়েছে মাত্র ২টি ওয়ানডে। প্রথমে ব্যাট করে গড় সংগ্রহ ১৫১ এবং সর্বোচ্চ তাড়া করে জেতা দলের রান ১৯০। এ মাঠে পরে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা ১০০ ভাগ, তবে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের সাফল্যের হার বেশি। ইকোনোমিতে পেসার ও স্পিনারদের গড় প্রায় সমান।
ইকানা স্টেডিয়াম, লক্ষ্ণৌ
লক্ষ্ণৌ ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। ইকানা স্টেডিয়ামের পুরো নাম ভারত রত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ইকানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং দর্শক ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার। সোজাসুজি স্টেডিয়ামটির গড় আয়তন ৬৮-৭০ মিটার এবং আড়াআড়ি ৬৩-৬৫ মিটার।
২০১৬ সালের পর এ মাঠে খেলা হয়েছে মাত্র ৪টি ওয়ানডে। প্রথমে ব্যাট করে গড় সংগ্রহ ২২৬ হলেও তাড়া করে জেতা দলের রান ২৪৯। প্রথমে ও পরে ব্যাট করে জেতা ম্যাচের সংখ্যা ৫০ শতাংশ। উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে পেসার ও স্পিনারদের পারফরম্যান্স সমান হলেও গড়ে পেসাররা এগিয়ে।
ইডেন গার্ডেনস, কলকাতা
ভারতের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও গুরুত্বের দিক থেকে সমৃদ্ধশালী শহর, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। আগে ভারত-পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের অধিকাংশই হতো এ স্টেডিয়ামে। এখানে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ খেলবে, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। ধারণক্ষমতা ৬৮ হাজার।
২০১৬ সালের পর মাঠটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে মাত্র ৩টি। প্রথমে ব্যাট করে গড় সংগ্রহ ২৬২ রান হলেও তাড়া করে জেতা দলের রান মাত্র ২১৫। এ মাঠে প্রথমে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ এবং পরে ব্যাট করে জেতা দলের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ। মাঠে পেসারদের দাপট এবং গড় দুটোই ভালো এবং স্পিনারদের হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে স্পিনারদের ইকোনোমির ভালো রেকর্ডও আছে।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মুম্বাই
মুম্বাই, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর অন্যতম একটি। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের একটি খেলা রয়েছে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৩২ হাজার। সোজাসুজি এ মাঠের গড় আয়তন ৬৮-৭২ মিটার এবং আড়াআড়ি ৬৪-৬৬ মিটার।
২০১৬ সালের পর খেলা হয়েছে মাত্র ৩টি ওয়ানডে। প্রথমে ব্যাট করে গড় সংগ্রহ ২৪১ হলেও রান তাড়া করে জেতা দলের রান ২৮০। প্রথমে ব্যাট করা দল একটিও জয় পায়নি। পরে ব্যাট করা দলগুলো সব ম্যাচ জিতেছে। এ মাঠে পেসারদের দাপট স্পিনারদের চেয়ে বেশি এবং গড়েও তারা অনেক এগিয়ে।
এমসিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, পুনে
পুনে, মহারাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক রাজধানী যার পূর্বনাম পুনা। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলবে এখানে। এর পুরো নাম মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, যার দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৪০০। ২০১৬ সালের পর ম্যাচ খেলা হয়েছে মাত্র ৬টি।
প্রথমে ব্যাট করা দলের সংগ্রহ ৩০৭ রান এবং তাড়া করে জেতা দলের রান ৩৫০। প্রথমে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা এবং পরে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা সমান ৫০ শতাংশ করে। এ মাঠে পেসারদের দাপটের ধারেকাছে নেই স্পিনাররা এবং তাদের গড় ও ইকোনোমি রেট স্পিনারদের চেয়ে অনেক ভালো। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচটি এখানে হবে।
এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু
বেঙ্গালোর আনুষ্ঠানিকভাবে বেঙ্গালুরু নামে পরিচিত, দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর ও রাজধানী। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম বা কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত ভেন্যুটি। দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার এবং পিচের সংখ্যা ৪টি। সোজাসুজি এ মাঠের গড় আয়তন ৬৫ মিটার এবং আড়াআড়ি ৫৫-৬০ মিটার।
২০১৬ সালের পর এখানে খেলা হয়েছে মাত্র ২টি ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করা দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩১০ রান এবং তাড়া করে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৮৬ রান। প্রথমে ও পরে ব্যাট করে জেতার সংখ্যা ৫০ শতাংশ। পেসারদের ইকোনোমি রেট বেশি হলেও উইকেট নিয়েছে তারাই বেশি। স্পিনারদের চেয়ে গড় ভালো পেসারদের।
এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম, চেন্নাই
পূর্বে মাদ্রাজ নামে পরিচিত চেন্নাই ভারতের তামিলনাড়ুর রাজধানী এবং দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম মেট্রোপলিটান শহর। মুথিয়া আন্নামালাই চিদাম্বরম বা এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজার। বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ এখানে হবে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। মাঠে পিচের সংখ্যা ৯টি।
২০১৬ সালের পর ওয়ানডে খেলা হয়েছে ৩টি। প্রথমে ব্যাট করা দলের গড়ে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৭৯ রান এবং তাড়া করে জেতা দলের রান ২৮৭। প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে দুই-তৃতীয়াংশ ম্যাচে এবং পরে ব্যাট করে জিতেছে এক-তৃতীয়াংশ। অন্যান্য পিচের মতো এ মাঠেও পেসারদের আধিপত্য রয়েছে এবং পেসার ও স্পিনারদের ইকোনোমি সমান।
রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, হায়দরাবাদ
হায়দরাবাদ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী ও সবচেয়ে বৃহত্তম শহর। এটি ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম জনবহুল শহর। রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৫৫ হাজার।
২০১৬ সালের পর ওয়ানডে খেলা হয়েছে মাত্র ২টি। প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ২৯২ রান এবং তাড়া করা দল সর্বোচ্চ ২৩৬ রান করতে পেরেছে। প্রথমে ব্যাট করা দলের জয়ের সংখ্যা এবং পরে ব্যাট করা দলের জয়ের সংখ্যা সমান। এ মাঠের পিচ ও গড় পেসারদের জন্য সহায়ক। ইকোনোমি স্পিনারদের ভালো।