<![CDATA[
পিরোজপুরের ইউনিয়নগুলোতে গ্রাম আদালতে অল্প সময়েই নিষ্পত্তি হচ্ছে ছোটখাটো মামলা। এসব মামলা স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষদের আর আদালতের বারান্দায় ঘুরে সময় নষ্ট ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। ফলে আদালতে মামলার চাপ অনেকটাই কমছে বলে জানান জেলার সরকারি কৌঁসুলি।
পিরোজপুরের ৫৩টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বিচার প্রত্যাশীদের জেলা সদরে আসতে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। আর গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘুরে সময় নষ্ট ও টাকা খরচ করতে হয়।
কিন্তু গ্রাম আদালত চালু হওয়ায় স্থানীয়ভাবে অল্প সময়েই নিষ্পত্তি হচ্ছে ছোটখাটো মামলা। ফলে মামলা জট আর তারিখের দীর্ঘসূত্রিতায় বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে না। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থার প্রতি দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন।
শারিকতলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারুক শেখ বলেন, ‘গ্রাম আদালতে এসে আমার একটি পারিবারিক সমস্যা এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করতে পেরেছি। কিন্তু আদালত অথবা থানায় গেলে এটা নিয়ে আমাকে দীর্ঘদিন ভোগান্তি পোহাতে হতো এবং সমাধান পেতে দেরি হতো । তাই গ্রাম আদালত চালু হওয়ায় আমরা উপকৃত হয়েছি।’
আরও পড়ুন: গ্রাম আদালতের সুফল পাচ্ছেন নাটোরবাসী
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিভিন্ন সালিশ গ্রুপের মাধ্যমে নিজে শুনানি করে মামলার নিষ্পত্তি করেন। এ সব মামলা প্রায় বিনা খরচে স্বল্প ঝামেলায় সমাধান হওয়ায় স্থানীয়রা বড় বড় সমস্যা নিয়ে সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হচ্ছেন গ্রাম আদালতে।
৬নং শারিকতলা ডুমরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমীর হোসেন মাঝি বলেন, ‘ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ বড় কোনো সমস্যা না হলে থানা পুলিশ অথবা আদালতে যায় না। তারা ইউনিয়ন পরিষদে সমস্যা নিয়ে আসে। আমি ও আমার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসার মাধ্যমে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে সমস্যার সমাধান করি ৩০ দিনের মধ্যে। এর ফলে ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় সাধারণ বিচার প্রার্থীরা।’
ছোট মামলাগুলো গ্রাম আদালতে দ্রুত সমাধান হওয়ায় জেলার আদালতে মামলার পরিমাণ কমেছে বলে জানান জেলার পিপি।
আরও পড়ুন: আদালতে মামলাজট, শেষ সম্বল হাস-মুরগি বিক্রি করেও মিলছে না নিষ্পত্তি
পিরোজপুর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘ছোটখাটো পারিবারিক বিষয় নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণ হয় এবং মানুষকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ক্ষতিসহ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সমস্যা সমাধানে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
কিন্তু গ্রাম আদালতের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সমস্যার সমাধান করলে সামাজিকভাবে এটার সুফল পাওয়া যায়। পরবর্তীতেও এটি নিয়ে আর সমস্যা হয় না। কারণ উভয়পক্ষের সম্মতিতেই সমস্যার সমাধান করা হয়।’
জেলা আদালতে একটি মামলা নিষ্পত্তিতে ২ বছর থেকে এক দশক সময় লাগলেও গ্রাম আদালতে ৩০ দিনেই নিষ্পত্তি হয়।
]]>