খুলনার সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে কুমিল্লায় আসা নাসিম শাহ এবার ডুবালেন নাসিরের ঢাকাকে। নাসিম শাহ’র পেস আগুনে পুড়ে ছাই হয় ঢাকা ডমিনেটরসের ব্যাটিং লাইন। লড়াকু সংগ্রহ নিয়েও নাসিমের আগুন বোলিংয়ের সুবাদে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পেয়েছে ৬০ রানের বড় জয়। মিরপুরে ফাস্ট বোলিংয়ের দারুণ প্রদর্শনী দেখানো নাসিমের হাতেই উঠল ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
বিপিএল ঢাকায় ফিরলেও জয়ে ফেরেনি ঢাকা। পরাজয়ের ডাবল হ্যাটট্রিক পূর্ণ করল নাসির হোসেনের এই দল। বিপরীতে টানা চতুর্থ জয় তুলে নিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। নাসিম শাহ’র ৪-০-১২-৪; এটিই এখন পর্যন্ত এবারের বিপিএলের সেরা বোলিং ফিগার। তার গতি, মুভমেন্ট ও বাউন্সের কাছেই যেন কুপোকাত ঢাকা।
টস জিতে আগে বোলিং নিয়ে দারুণ শুরু করেন ঢাকা ডমিনেটরসের পেসার তাসকিন আহমেদ। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে লিটন, রিজওয়ানের বিপক্ষে খরচ করেন কেবল ১ রান। আরাফাত সানির করা আগের ওভারে নতুন জীবন পাওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান সেই তিন রানেই হয়েছেন বোল্ড। আল-আমিন হোসেন বোল্ড করে স্বস্তি দেন ক্যাচ মিস করা উসমান গনিকে। এই ওভারে কোনো রান না দিয়ে আল-আমিনের নামের পাশে এক উইকেট।
প্রথম ওভারে মেডেনসহ উইকেট পাওয়া আল-আমিন পরের ওভারে এসে লিটন-ইমরুলের কাছে খরচ করেন ১৫ রান। দারুণ খেলতে থাকা লিটনকে এসেই বিদায় করেন অধিনায়ক নাসির হোসেন। বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে ফেরার আগে লিটনের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।
১০তম ওভারের শেষ বলে আমির হামজা ভাঙেন ইমরুল কায়েসের স্টাম্প। মাত্র তিন রান খরচায় ১ উইকেট শিকার করে নিজের প্রথম ওভার শেষ করেন হামজা। ২২ বল খেলে ৫ চারের মারে ইমরুল থামেন ২৮ রানে। এরপর মোসাদ্দেকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়েন জনসন চার্লস। ফেরার আগে ২৫ বলে করেন ৩২ রান।
অধিনায়ক নাসিরের দ্বিতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ১১ রানে থাকাকালীন খুশদিল শাহ ক্যাচ তুলেন। কিন্তু আরাফাত সানির হাত ফসকে বেরিয়ে যায় বল। কিন্তু নাসিরের ঘূর্ণি চলতেই থাকে। নিজের পরের ওভার করতে এসেই ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন মোসাদ্দেক হোসেনকে (৯)।
ভয়ংকর হয়ে উঠা খুশদিলকে ইনিংস বড় করতে দেননি তাসকিন আহমেদ। বল আকাশে ভাসিয়ে ক্যাচ হন উইকেটকিপার মিঠুনের হাতে। ১৭ বল খেলে সমান দুই ৪ ও ৬ এর মারে খুশদিল খেলেন ৩০ রানের ইনিংস। এরপর জাকের আলি অনিকের ২০ রানের ক্যামিওতে ৬ উইকেটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পায় ১৬৪ রানের সংগ্রহ।
বল হাতে বিপিএলে নেমেই নাসিম শাহ’র বাজিমাত। নিজের প্রথম ওভার করতে এসে স্টাম্প ভাঙেন ঢাকার ওপেনার মিজানুরের (৫)। ফের ব্যর্থ সৌম্য সরকার। আবু হায়দার রনিকে ৬ হাঁকাতে যেয়ে বল আকাশে তুলে হয়েছেন ক্যাচ। ফেরার আগে ৭ বলে করেন কেবল ৩।
তিনে নামা মোহাম্মদ মিঠুনও প্যাভিলিয়নে ফেরত যান দ্রুত। তাকে ফিরিয়ে নাসিম শাহ দখলে নেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। পরপর দুই ওভারের নাসিমের ঝুলিতে দুই উইকেট, মাত্র পাঁচ রান খরচায়। স্কোরবোর্ডে ১৬ রান তুলতেই ঢাকা ডমিনেটরস খুইয়ে ফেলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে। এদিন হাসেনি অধিনায়ক নাসির হোসেনের ব্যাটও। ব্যক্তিগত ১৭ রানে খুশদিলের বলে নাসিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাসির। স্পিন বিষে খুশদিল তুলে নেন আরিফুল হকের (১১) উইকেটও।
নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে পরপর দুই বলে দুই উইকেট শিকার করেন নাসিম। মুক্তার আলিকে ফেরান উইকেটকিপার লিটনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে। আমির হামজাকে ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগানো নাসিমকে হতাশ করেন ব্যাটসম্যান তাসকিন। নাসিমের পরের ওভারে এসে মুকিদুল ফেরান তাসকিনকে। দুর্দান্ত এক ক্যাচের প্রদর্শনী দেখান লিটন দাস।
৭৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলা ঢাকা ডমিনেটরস শেষপর্যন্ত থামে ৯ উইকেটে ১০৪ রানে। উসমান গণির ৩৩ রানের ইনিংস কমিয়েছে কেবল হারের ব্যবধান।আল-আমিন হোসেন অপরাজিত থাকেন ১৪ রান নিয়ে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৬০ রানের বড় জয় নিয়ে উঠে আসল টেবিলের তিনে।