হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কোন্দা

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কোন্দা
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কোন্দা

মাহফুজুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কোন্দা নামক বাহনটি। যা ডোঙ্গা নামেও পরিচিত। এক সময় গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্র চোখে পড়তো তাল গাছ দিয়ে তৈরি কোন্দা নামক এই বিশেষ নৌকাটি। যা গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল। সাধারণত দুই তিনজনের পারাপার, মাছ ধরা, ধান কাটা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ, বিল ও পুকুরের মাছের ঘেরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো এ তালের কোন্দা।

কোন্দা অনেকের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমও ছিল। এছাড়াও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ খেলায়ও কোন্দার ব্যবহার হতো। খেলা ও বিনোদনের অংশ হিসাবে পাড়া-মহল্লায় গ্রামের লোকজন স্থানীয়ভাবে এ বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করত। এখন আর তেমন দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে গ্রামীণ সড়ক তৈরি ও পাকাকরণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় বলতে গেলে হারিয়ে গেছে এই নৌকাটি।

জানা যায়, মাত্র দুই/তিন দশক আগেও কোন্দার ব্যাপক প্রচলণ ছিল। বিলে ও গ্রামের নিন্মাঞ্চল এলাকায় পানি থাকতো সারা বছর। লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় কাজসহ বাড়ি থেকে হাট বাজার এবং বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতেন কোন্দা দিয়ে। এর অন্যতম কারণ ছিল, তালের কোন্দা বেশ টেকসহ ও মজবুত। যদিও খুব বেশি মানুষ বা মালামাল বহন করা যেতো না। তবে পারিবারিক কাজে নিত্য ব্যবহার হতো এই কোন্দা।

কিন্তু এখন আর কোন্দার ব্যবহার চোখে পড়ে না। গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক উন্নয়ন, মাঠ, বিলে-ঝিলে বাড়ি ও বসতঘর হয়ে যাওয়া এবং তাল গাছের আধিক্য না থাকায় কোন্দা এখন বিলুপ্তির পথে। এ পেশার লোকজন ও কোন্দা তৈরির কারিগররা তাদের পেশা পরিবর্তন করে নিয়েছেন। তবে এর মধ্যে অনেক কারিগর তাদের পৈত্রিক এই ব্যবসা ধরে রাখার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো কিছু কোন্দা তারা তৈরি করছেন।

চাঁদপুরের বাকিলা ইউনিয়নের চতন্তর গ্রামে তাল গাছের নৌকা তৈরির প্রায় অর্ধশত কারিগর পরিবারের বসবাস।

তারা জানান, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, তাল গাছ না পাওয়া, কোন্দার দাম বৃদ্ধি, পরিশ্রমের তুলনায় মুজুরী কম হওয়ায় কোন্দা তৈরিও হয়না এবং এর প্রচলণ নেই বললেই চলে। আগে খাল-বিলে নিয়মিত পানি থাকার ফলে সারা বছর কোন্দা তৈরি হত। এখন শুধুমাত্র বর্ষায় তৈরি করা হয়। আর কোন্দা তৈরির উপযোগি একটি তাল গাছ কিনতে ১০ হাজার টাকা লাগে এবং সেই গাছ কেটে আনতে আরো ৫ হাজার টাকা ব্যয়। এরপর দুইজন কারিগরের প্রায় এক সপ্তাহের পরিশ্রমে একটি কোন্দা তৈরি হয়। অথচ একটি কোন্দা ১২-১৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না।

কারিগর আব্দুল হামিদ বলেন, এখন আর নৌকা তৈরিতে কোন লাভ নাই। পৈত্রিক ব্যবসা ছিল। যা বাপ-দাদার কাছ থেকে শিখেছি। যার মায়ার কারণে এবং এক প্রকার বাধ্য হয়ে এই পেশায় পড়ে আছি। তিনি জানান, কখনো বা কোন দিনের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাইনি।

রাজারগাঁও থেকে আসা রফিক নামের একজন ক্রেতা জানান, ছোট বেলায় সাড়ে ৩ হাজার কিংবা ৪ হাজার টাকায় একটি তালের নৌকা নিলে তা ১০/১২ বছরে নষ্ট হতো না। এখন ১২ থেকে ১৫ হাজারে একটি নৌকা কিনলেও এখন আর আগের মতো স্থায়ীত্ব নেই। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, পুরনো তাল গাছ পাওয়া যায়না।

Scroll to Top