আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৯৮ দিনের ব্যবধানে চীনের ভারতে অবস্থিত দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো ৮৫ হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিককে ভিসা দিয়েছে। চীনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সু ফিহং এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত সু ফিহং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানান, ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৮৫ হাজারের বেশি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
চীনে ভ্রমণে ভারতীয়দের উৎসাহ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারতীয় পর্যটকদের জন্য চীন এখন আরও বেশি উন্মুক্ত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। চীনের অভ্যন্তরে শিক্ষা, ব্যবসা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বেইজিং আগ্রহী।
ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছে চীন। এখন আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হচ্ছে না—সরাসরি ভিসা কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে স্বল্প মেয়াদি ভ্রমণকারীদের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও বাতিল করা হয়েছে। কমানো হয়েছে ভিসা ফি, আর অনুমোদনের সময়সীমাও হয়েছে আরও দ্রুত।
চীন মনে করছে, এ পদক্ষেপের ফলে ব্যবসা ও ভ্রমণ—উভয় খাতে ভারতীয়দের আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষার্থী বিনিময় এবং পর্যটনের ক্ষেত্রেও এটি একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করবে।
চীন বর্তমানে ভারতীয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক উৎসব এবং ঐতিহাসিক স্থানের প্রচারে জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে চীন দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববাণিজ্যে একাধিক শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও বেশিরভাগ দেশের জন্য তা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে এখনো ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বলবৎ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং বলেন, বৃহৎ দুই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত ও চীনের উচিত একসঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। তাঁর মতে, একতরফা শুল্ক আরোপ এবং প্রোটেকশনিজমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত ইস্যুতে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা থাকলেও এই ভিসা ছাড়ের উদ্যোগকে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরির একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।