৭ জানুয়ারির ভোট নিয়ে উদ্বেগ | চ্যানেল আই অনলাইন

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এএনএফআরইএল)। এএনএফআরইএল বলেছে, তারা জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, এই নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘাটতি রয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বৈধতার জন্য অত্যাবশ্যক গণতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ ও আন্তর্জাতিক নির্বাচনী মানদণ্ড অনুসৃত হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এএনএফআরইএলের মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক না হাওয়া এবং জবাবদিহির অভাবে এতে স্বচ্ছতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিরোধীদের দমন, রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংকোচন, নিরপেক্ষ তথ্যে নাগরিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত হওয়া এবং রাজনৈতিক সহিংসতা চলমান থাকার মতো চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

Bkash

এএনএফআরইল হলো এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক সংগঠনের নেটওয়ার্ক। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই নেটওয়ার্ক এশিয়ার দেশগুলোতে নির্বাচন ও নির্বাচন মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। ব্যাংককে এর প্রধান কার্যালয়। এই নেটওয়ার্কে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিক সংগঠনও রয়েছে।

নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এখানে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সহিংস সংঘাতের খবর রয়েছে। এসব সংঘাতে বহু মানুষ আহত ও দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এরপরও নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবিলায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি। নির্বাচনী সহিংসতা ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মাত্রাকে খাটো করে তাদের দেওয়া বক্তব্য-বিবৃতি তদারকি ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

Reneta June

বিবৃতিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা এবং এরপর দলটির ২১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটকের তথ্য দিয়ে এএনএফআরইএল বলেছে, এতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারাবন্দী অবস্থায় বিএনপির নয়জন নেতাকর্মীর মৃত্যু এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ মনোযোগ ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

এএনএফআরইএল বলেছে, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই এখানে রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী। জাতীয় পার্টির বিগত বছরগুলোতে নির্বাচনে ভালো ফল করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান সরকার বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে দমনপীড়ন চালাচ্ছে। বিএনপি ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এই অবস্থানের কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এবং বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নের ঘটনা সামনে এনেছে। একই ধরনের উদ্বেগ জানিয়ে অনেক প্রার্থীও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজন ও উন্নয়ন সহযোগীরা বারবার সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অব্যাহতভাবে সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে নির্বাচনী পরিবেশ আরও জটিল হয়েছে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক হওয়া এবং এর স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এএনএফআরইল বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। সব গণতান্ত্রিক দেশসহ বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে এমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে তারা।

Scroll to Top