ইৎসহাক শাপিরা এবং ইয়োসেফ এলিৎসুর নামের দুজন রাবাইয়ের লেখা ‘তোরাত হামেলেখ’ (ইংরেজিতে যার শিরোনাম ‘কিং’স তোরাহ’ এবং বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে ‘রাজাধিরাজের তোরাহ’) একটি ইহুদি ধর্মীয় গ্রন্থ বা হালাখার প্রথম খণ্ড ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসির ‘কিংস তোরাহ স্প্লিটস ইসরায়েল’স রিলিজিয়াস অ্যান্ড সেক্যুলার জ্যুস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বইয়ে মূলত এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ইহুদি ধর্মীয় আইনের ভিত্তিতে অ–ইহুদিদের (অর্থাৎ ইহুদি নয় এমন মানুষ) হত্যা করা বৈধ হতে পারে। এই দাবি করা হয়েছে নির্দিষ্ট ইহুদি ধর্মগ্রন্থের নির্বাচিত উদ্ধৃতির দোহাই দিয়ে।
বইটির প্রথম খণ্ডে আলোচনা করা হয়েছে—শান্তিকাল ও যুদ্ধকাল, উভয় সময়েই অ–ইহুদিদের হত্যা সংক্রান্ত বিধান। সেখানে বলা হয়েছে, অ–ইহুদিরা যদি ‘নূহের সাতটি বিধান’ না মানে, তাহলে যুদ্ধের সময় ছাড়াও তাদের হত্যা করা বৈধ হতে পারে।
২০১৬ সালের শেষে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে শাসনব্যবস্থা ও শাসকের ক্ষমতা নিয়ে।
এই অংশে একটি সরকার গঠন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, একজন নাগরিকের সেই সরকারের প্রতি কতটা আনুগত্য থাকা উচিত এবং সরকার চাইলে কোনো ব্যক্তিকে কেন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে পারে—তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম হলো ‘যুদ্ধের সময় অইহুদিদের হত্যা’। এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘ইহুদিদের জীবন রক্ষা করার জন্য, এমন অইহুদিদেরও হত্যা করা যেতে পারে যারা সরাসরি হত্যা সমর্থন করছে না বা তাতে উৎসাহও দিচ্ছে না।’
প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর থেকেই বইটি ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। ইসরায়েলের বাম ও প্রগতিশীল গোষ্ঠী বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি করলেও নেতানিয়াহু সরকার তা করেনি। ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট বইটির লেখকদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘লেখকদের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সন্দেহ করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে ইসরায়েলের আরবা ও হেবরনের সাবেক প্রধান রাবাই ডোভ লিয়র এবং নেতানিয়াহুর দলের নীতি নির্ধারন পরিষদের সদস্য রাবাই ইয়াকব ইউসেফের মতো প্রভাবশালী ধর্মগুরুরা বইটিকে অনুমোদন দিয়েছেন।
এ কারণেই মূলত ইসরায়েলের সেনারা ফিলিস্তিনি শিশু বা নারী বা বৃদ্ধদের হত্যা করার পর সাধারণত কোনো ধরনের অনুশোচনা বা বিবেক তাড়নায় আক্রান্ত হন না। কারণ, তাঁদের মাথায় থাকে, ইসরায়েলের যারা শত্রু, তারা হলো সেই ‘আমালেক’, যাদের চিহ্ন ঈশ্বর তোরাহ-এর ২৫: ১৭ আয়াতে ‘আকাশের নিচ থেকে’ পুরোপুরি ‘মুছে’ ফেলতে আদেশ দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বহুবার ইরানকে ‘আমালেক’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তিনি চলতি বছরের ১৪ মার্চ বেইত শেমেশে অবস্থিত ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে পুরিম উপলক্ষে ‘এস্থারের পুস্তক’ পাঠে অংশ নেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন: ‘আড়াই হাজার বছর পর সেই ভূমিতেই (পারস্য, আজকের ইরান) আবার এক শত্রু ইহুদিদের ধ্বংস করতে উঠে এসেছে। সেও চায় ইহুদি জাতিকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে। কিন্তু তোমাদের মতো বীর উঠে এসেছে—আমাদের জাতির বীরেরা। আমরা বুদ্ধিমত্তা, বীরত্ব ও সাহসিকতায় পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছি। আমরা পারস্য অক্ষকে ভেঙে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইতিহাসের সেই পুরোনো যুদ্ধেই আছি; পারস্য (আজকের ইরান) বনাম ইসরায়েল—হামান বনাম মরদখাই।’