মো.শফিউল্লাহ রিপন: ফেনী জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী ও কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে যেন চলছে ভাঙা গড়ার খেলা। গত ৭ বছরে ১২২ কিলোমিটার বাঁধের ২০০ স্থানে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৫ বছরে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় হলেও বন্যার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়নি ফেনীবাসী।
শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় প্রাণ গেছে ২৯ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাইতেও ৪২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ২৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর বাঁধ নির্মান ও জরুরী সংস্কারে ৩১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। জেলার ৩টি নদীর ভাঙন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে প্রবল বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হতো এ দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। এসব মানুষের জানমাল ও কৃষি সম্পদ বাঁচাতে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর উপর ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২২ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
২০১১ সালে বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হলে পরের কয়েক বছর বন্যামুক্ত ছিল স্থানীয়রা। ২০১৩ সালে আকস্মিক বাঁধের ৩টি অংশ ভেঙে যায়। পরে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙন অংশ মেরামত করা হয়।
এরপর প্রতি বছর ভাঙ্গে বাঁধের বিভিন্ন স্থান। গত ৭ বছরে মুহুরী নদীর ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খরচের হিসাবে দেখা যায়, ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সর্বশেষ জুলাই মাসে বাঁধের ১১৫ মিটার অংশ ভেঙেছে। এটি মেরামতে তাদের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, জলের টাকা জলেই গেছে। এতে বাঁধ ভাঙন রোধ হয়নি, তাদের দুর্দশাও কাটেনি। বরং বর্ষা মৌসুমে আসলেই নতুন নতুন স্থানে বাঁধে ভাঙনের দেখা দেয়।
ফুলগাজী উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বন্যা থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ নির্মাণ করলেও তা স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। ভাঙন মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া কোটি কোটি টাকা পানিতে ভেসে যায়। স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় প্রতিবছর নদীর বাঁধ ভেঙে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
পরশুরামের বাসিন্দা আবু ইউসুফ বলেন, বাধের একই জায়গায় বারবার ভেঙে যায়। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ আসে প্রতিবছর। বন্যা হলে কিছু অসাধু কর্মকর্তার কপাল খুলে যায়।
এদিকে ৬ আগস্ট ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কারকাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তাদের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক। এ সময় দুদক কর্মকর্তারা ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কার কাজের তথ্য জানতে চেয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারই বাঁধ সংস্কারের কাজ পেয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে রয়েছে, মেসার্স কাশেম ট্রেডার্স, মেসার্স ফেনী ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশন, মেসার্স ইমেজ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাহ সুফি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাশেম জানান, বিল পেতে দীর্ঘ সময়ের কারনে অন্য প্রতিষ্ঠান কাজ করতে চায় না।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, আগামীতে টেকসই বাধঁ নির্মানের জন্য আমরা মন্ত্রনালয়কে জানিয়েছি। মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে ১২৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, নদী খনন, রেগুলেটর, বাঁধ, সেতু, ফ্লাড বাইপাস এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।