১২ বছরেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যান্ড বিটিএস! | চ্যানেল আই অনলাইন

১২ বছরেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যান্ড বিটিএস! | চ্যানেল আই অনলাইন

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক ব্যান্ড আসে, অনেকেই হারিয়ে যায়। কিন্তু কেউ কেউ ইতিহাস তৈরি করে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাত তরুণ যখন ২০১৩ সালের ১৩ জুন ‘নো মোর ড্রিম’ গানের মাধ্যমে প্রথমবার স্টেজ শোতে আত্মপ্রকাশ করে, তখন হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি যে এই ব্যান্ড একদিন বিশ্ব সংগীতের এক বিপ্লবের প্রতীক হয়ে উঠবে!

বলছি জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস এর কথা! ১২ বছর পূর্ণ করল ব্যান্ডটি। আর এই ১২ বছরের যাত্রা শুধুমাত্র পপ সংগীতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি সংস্কৃতি, পরিচয়, আবেগ ও প্রতিবাদের কণ্ঠ হয়ে উঠেছে গোটা প্রজন্মের জন্য।

‘বিটিএস’ শব্দটি কোরিয়ান বাক্যাংশ ‘বাংতান সনিয়নদান’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার আক্ষরিক অর্থ ‘বুলেটপ্রুফ বয় স্কাউটস’! জে-হোপ এর মতে, এই নামের তাৎপর্য হলো—“কিশোরদের ওপর যেসব স্টেরিওটাইপ সমালোচনা ও সামাজিক প্রত্যাশা গুলির মতো ছুটে আসে, সেগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করা।”

২০১৭ সালের জুলাই মাসে ‘বিটিএস’ ঘোষণা দেয় যে তাদের নামের নতুন ব্যাখ্যা হবে ‘বেয়ন্ড দ্য সিন’। এই নতুন ব্র্যান্ড পরিচয়ের মাধ্যমে বিটিএস বোঝাতে চায় এমন এক অভিযাত্রা, যেখানে একজন কিশোর ধীরে ধীরে পূর্ণবয়স্কে রূপ নেয় এবং সামনে থাকা দরজাগুলো সাহসের সঙ্গে খুলে দেয়।

দলটি শুরু হয়েছিল ‘বিগ হিট এন্টারটেনমেন্ট’-এর হাত ধরে—তখনকার তুলনায় একেবারেই অচেনা এক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আরএম, জিন, সুগা,জে হোপ, জিমিন, ভি এবং জাংকুক—এই সাতজন মিলে গড়ে তুলেছিলেন এমন একটি শক্তিশালী ইউনিট, যাদের প্রতিটি গান, প্রতিটি মঞ্চ যেন নিজেই এক গল্প হয়ে উঠে!

তাদের প্রথম দিককার গানগুলোতে ছিল সমাজের চাপ, তরুণদের হতাশা ও আত্ম-অন্বেষণের সুর। নো মোর ড্রিম, এন ও কিংবা ডোপ—প্রত্যেকটি গান ছিল সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ।

২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ‘দ্য মোস্ট বিউটিফুল মোমেন্ট ইন লাইফ’ সিরিজ এবং তারপর ‘উইংস’ অ্যালবাম দিয়ে ধীরে ধীরে বিশ্বসংগীতের মানচিত্রে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে থাকে। কিন্তু ২০১৭ সালে ‘ডিএনএ’ এবং ‘মাইক ড্রপ’ দিয়ে তারা যে আন্তর্জাতিক প্রবাহ তৈরি করেছিল, তা কে-পপ ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো অধ্যায়।

কোরিয়ার বুসানে বিটিএস এর একটি কনসার্ট

বিটিএস প্রথম কোরিয়ান গ্রুপ যারা ‘বিলবোর্ড হট ১০০’-এ এক নম্বরে উঠে আসে। জাতীসংঘে ভাষণ দেয়, এবং হোয়াইট হাউসে পর্যন্ত নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেয়। লাভ ইউরসেল্ফ ক্যাম্পেইন হোক বা স্পিক ইউরসেল্ফ ট্যুর—তাদের প্রভাব শুধুই বিনোদনজগতের গণ্ডিতে আটকে ছিল না।

দলটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের ভক্তগোষ্ঠী— যাদেরকে বলা হয় বিটিএস আর্মি! বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই সমর্থকগোষ্ঠী শুধু গান শোনে না, বিটিএস বিশ্লেষকদের মতে বিটিএস আর্মিরা ব্যান্ডের আদর্শ, মানবিক বার্তা ও সহানুভূতিকে নিজেদের জীবনে ধারণ করে।

মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মপ্রেম, সহনশীলতা—এই সবকিছুকে বিটিএস বারবার সামনে এনেছে, গান ও কথোপকথনের মাধ্যমে।

২০২২ সালের পর থেকে সদস্যরা একে একে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তবে তারা জানিয়েছেন, দলের যাত্রা এখানেই শেষ নয়—বরং এটা এক ধরনের বিশ্রাম। এর মধ্যেও জে হোপ, আরএম, সুগা, জাংকুক, জিমিন ও ভি এককভাবে নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলেছেন। একাধিক একক অ্যালবাম, কনসার্টেও তাদের আলাদা সত্ত্বা তৈরী করেছেন।

সম্প্রতি জিন ও জে হোপ সেনাবাহিনীর ট্রেনিং শেষে ফিরে এসেছেন, আর বাকিরাও খুব শিগগির ফিরে আসছেন বলে খবর। সেই প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে কোটি কোটি বিটিএস আর্মির হৃদয়।

১২ বছরের যাত্রায় বিটিএস উপহার দিয়েছে অসংখ্য স্মরণীয় পপ গান, অ্যালবাম এবং দুনিয়ার নামকরা শিল্পীদের সঙ্গে সফল সব কোলাবরেশন। ১৩ জুন বিটিএস তাদের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। আর সে উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তদের ভালোবাসা আর শুভেচ্ছায় ভরে উঠেছে টাইমলাইন। #হ্যাপিবার্থডেবিটিএস হ্যাশট্যাগে ভরে উঠেছে হাজারো মিষ্টি মুহূর্ত ও আবেগঘন বার্তা।

এদিন এক আবেগময় নোট শেয়ার করেছেন বিটিএস লিডার কিম নামজুন ওরফে আরএম। তিনি লেখেন,“শুভ জন্মদিন, বিটিএস। আবারও ৬/১৩ চলে এসেছে। বিশ্বাসই হচ্ছে না। গত বছরের ৬/১৩ (প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী) সহজ ছিল না। আমি তোমাদের চেয়েও বেশি অপেক্ষা করেছি। অপেক্ষা করেছি, করেছি, সত্যি করেছি। ১২ বছর পূর্ণ! এখন যেন ১২ বছর বয়সী হয়ে গেলে! মনে হয়, আমার মাল্টিভার্সের ভাইঝি হয়ে গেছো! আমি খুশি যে তুমি ভালোভাবে বড় হয়েছো। বাবা-মায়ের কথা শুনো—না, হয়তো একটু-আধটুই শোনা ভালো। এমন রাতেই এসব কথা মনে আসে। আজ আমার ছোট ভাইয়ের জন্মদিন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটালাম। গোসল করার আগে, পেন্সিলের নিব ভেঙে যাওয়ার মুহূর্তে লিখছি এই অদ্ভুত বার্তা। সত্যি বলতে, ভাবতেই পারিনি এই দিনটা এসে যাবে।”

এই কথাগুলোর ভেতর দিয়ে যেন ভক্তদের প্রতি ভালোবাসা, সময়ের ভার, এবং নিজেদের মধ্যে গড়ে ওঠা এক গভীর সম্পর্কই প্রকাশ করে গেলেন আরএম।-কেবিএস, ফিল্মফেয়ার এবং টাইমস নাউ

Scroll to Top