হুমায়রার জীবনের শেষ অধ্যায়েও ট্র্যাজেডি | চ্যানেল আই অনলাইন

হুমায়রার জীবনের শেষ অধ্যায়েও ট্র্যাজেডি | চ্যানেল আই অনলাইন

পাকিস্তানের অভিনেত্রী হুমায়রা আসগর আলি, যাকে গত মঙ্গলবার করাচির ডিফেন্স হাউজিং অথরিটি (ডিএইচএ) ফেজ-৬-এর ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তার মরদেহ নিতে অবশেষে রাজি হয়েছে পরিবার।

লাহোর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার করাচিতে এসে মরদেহ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ইত্তেহাদ কমার্শিয়াল এলাকায় অবস্থিত ফ্ল্যাটে ভাড়া বাকি থাকায় একটি স্থানীয় আদালত উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। এরপর মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে পুলিশ ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে। কোনো সাড়া না পেয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে হুমায়রার গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ডিআইজি দক্ষিণ সায়েদ আসাদ রাজা বলেন, মরদেহের অবস্থা দেখে বোঝা যায়, তিনি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে মারা গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে ফরেনসিক আলামত সংগ্রহ করে মরদেহ পাঠানো হয়েছে জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল সেন্টারে।

পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সায়েদ নিশ্চিত করেছেন যে মরদেহটি অত্যন্ত পচনধরা অবস্থায় ছিল, ফলে মৃত্যুর সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এসএসপি দক্ষিণ মেহজোর আলি জানান, হুমায়রা ২০১৮ সাল থেকে ওই ফ্ল্যাটে একা থাকতেন এবং গত অক্টোবরে শেষবার ভাড়া দেন। এরপর থেকে তিনি আর ভাড়া পরিশোধ করেননি। বাড়ির মালিকের পক্ষে ক্লিফটন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মামলা দায়ের করলে আদালত তাকে উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়।

মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ তার পরিবারের সন্ধান শুরু করে। জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে তার বাবা হুমায়রার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে যখন মেয়ের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, তখন তার মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি জানায় পরিবার।

পরে পুলিশ বাড়ির মালিকের মাধ্যমে ফোনে আবারও অভিনেত্রীর বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে, একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতিবার তারা করাচিতে আসবেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ জানায়, তার ফ্ল্যাট থেকে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেগুলোর ফরেনসিক বিশ্লেষণ চলছে। মৃত্যুর পেছনে কোনো অপরাধমূলক ঘটনা পাওয়া গেলে, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকলেও পুলিশ মামলা করবে। ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে তদন্তকারীরা।

হুমায়রার জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৯২ সালে, লাহোরে। ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল সম্পন্ন করেছেন তিনি। থিয়েটার, চিত্রকলা এবং গ্রাফিক ডিজাইন- এই তিনটি ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত ছিলেন হুমায়রা। তিনি মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৩ সালে। অংশ নিয়েছেন ব্রাইডাল কউচার উইক ও ফ্যাশন পাকিস্তান উইক-এ। ভিট মিস সুপার মডেল ২০১৪-তে ছিলেন ফাইনালিস্ট।

২০০২ সাল থেকে ১১০টিরও বেশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন (আজোকার থিয়েটার, রফি পিয়ার থিয়েটারসহ) হুমায়রা। টেলিভিশন নাটকের মধ্যে তার অভিনীত জনপ্রিয় নাটকগুলো হলো লাালি, সিরাত-ই-মুস্তাকিম, বেনাম, চল দিল মেরে। কাজ করেছেন সিনেমাতেও। জালাইবি (২০১৫) এবং লাভ ভ্যাকসিন (২০২১)-এ তার উপস্থিতি প্রশংসিত হয়েছে।

হুমায়রা আসগর আলির মৃত্যু পাকিস্তানের বিনোদন জগতে শোকের ছায়া ফেলেছে। দীর্ঘ থিয়েটার, টিভি ও ফ্যাশন ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী শিল্পী—যার জীবন, হয়তো নিঃসঙ্গতাতেই নিভে গেল। –দ্য কারেন্ট.পিকে

 

Scroll to Top