হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে পিটিআই-এর জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি ও পদায়ন ঘিরে মাঠপর্যায়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
প্রায় ১০-১২ বছরের জুনিয়রদের পদোন্নতি ও পদায়নের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। সেই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি ও পদায়ন স্থগিত করে আদেশ জারি করেছিল। তবে ৩১ জুলাই হাইকোর্টের সেই আদেশ অমান্য করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ৮২ জন পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরকে পদোন্নতি দিয়ে পদায়নের নির্দেশ দেয়, যার ফলে দেশে মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
নিয়োগ বিধিতে এ ধরনের বৈষম্যের প্রতিবাদে এখন উত্তাল দেশের বিভিন্ন উপজেলার ইউআরসি ও টিআরসির ইনস্ট্রাক্টররা।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার ১৯৯৮ সালে উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) প্রতিষ্ঠা করে, যার বর্তমান নাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ইউপিইটিসি)। এ দপ্তরটি জেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করে পিটিআই।
পিটিআই-তে প্রায় ১২ বছর আগে যোগ দেওয়া ইনস্ট্রাক্টরদের মধ্যে ৮২ জনকে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও ৩১ জুলাই সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়নের আদেশ জারি করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাখাওয়াত হোসেন সরকার।
এরপর ৩ আগস্ট বাদীর আবেদনে হাইকোর্ট পুনরায় স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে ওই ৮২ জন কর্মকর্তা ৪ আগস্ট সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হাইকোর্টের আদেশ এবং বিদ্যমান চাকরি বিধি উপেক্ষা করে বৈষম্যমূলকভাবে পদোন্নতি ও পদায়ন করায় ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টররা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এতে মাঠপর্যায়ের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বেশ কয়েকজন ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের সিনিয়রদের উপেক্ষা করে জুনিয়র কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়োগ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং প্রশাসনিক বৈষম্যের প্রতিফলন।
তাদের অভিযোগ, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদায়ন করে আদালতের আদেশ অবমাননা করা হয়েছে। কেন এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো, তা রহস্যজনক বলেও তারা মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরদের পক্ষে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ হাইকোর্টে ২৩৫১ নম্বর রিট পিটিশন দাখিল করেন জাকির হোসেন। আরেকটি রিট পিটিশন (নং ১০৮৪৪/২০২৪) দাখিল করেন রুবিউল ইসলাম।
এই রিটগুলোর প্রেক্ষিতে মাননীয় হাইকোর্টের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার এবং বিচারপতি কে. এম. জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ৩১ জুলাইয়ের পদোন্নতির আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। আদালতের নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, ৮২ জন পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট পদে যোগদানের বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
তবুও ৪ আগস্ট সোমবার ওই ৮২ জন কর্মকর্তা কাজে যোগ দেন বলে পদায়নের বিরোধিতাকারী কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
রিটকারি ও ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর জাকির হোসেন বলেন, “সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর চেতনাকে অবমাননা করা হয়েছে। দেশের জনগণ একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েছে। অথচ সেই বাংলাদেশে এমন বৈষম্যমূলক পদোন্নতি হতাশাজনক। আমরা সচিব এবং মহাপরিচালক মহোদয়ের কাছ থেকে বিষয়টির সুবিবেচনা কামনা করছি।”
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. সামসুজ্জামান-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাঁদের দপ্তর থেকে জানানো হয় যে তাঁরা সরকারি কাজে বাইরে রয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।