মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক মোঃ রজ্জব আলী খানের বিরুদ্ধে করা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানেন না অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী অনেকেই।
জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে রজ্জবের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করেছে ছাত্র সমাজের ব্যানারে কয়েকজন যুবক। এর আগে তারা অফিস সহায়ক রজ্জব আলী খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন বরারব লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অফিস সহায়ক মোঃ রজ্জব আলী খানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে এবং মানববন্ধনে উল্লেখ করা হয় তিনি সিজার থেকে শুরু করে হাসপাতালের এম্বুলেন্স মেরামতের এবং তেলের টাকা আত্মসাৎ করাসহ হাসপাতালের গাছের ডালাপালা বিক্রি করেছেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে ওই অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কয়েকজন অভিযোগকারী সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, তাদের অনেকেই বলেন-তারা জানেনই না অভিযোগপত্রে তাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও তারা হাসপাতালের দুর্নীতির বিষয়েও কিছু জানেন না এবং অভিযোগ করেননি এবং মানববন্ধনেও অনেকে উপস্থিত ছিলেন না বলেও তারা দাবি করেন।
অভিযোগকারীদের একজন কাণ্ঠাপাড়া এলাকার সুশীলের নাম্বার অভিযোগপত্রে ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান, হাসপাতালের অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি অভিযোগও করিনি।
বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, আমি প্রায় দুই মাস আগে একটা অ্যাকসিডেন্টের রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাই। সেলাই করতে বাইরে থেকে অনেক কিছুই কিনে আনা লাগছে। তাই আমি বলছিলাম এগুলো হাসপাতালেই থাকার কথা। এ জন্য স্বাক্ষর করেছি। তবে অভিযোগপত্রে আরও কি লেখা ছিল তা আমি পড়ে দেখিনি।
চাঁদপুর এলাকার সাইদ জানান, আমি একবার ফোঁড়া কাটতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমারে মানিকগঞ্জ পাঠাই দিছে। উপজেলা থেকে বলল, তাই আমি অভিযোগ করেছি। তবে দুর্নীতির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
সরকারি নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ের ২০১৩ সালের কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল জানান, ২০২১ সালে আমার কাছ থেকে স্টেশনারির মাল নেয়ার কথা ছিল। একবার চাহিদাপত্র দিয়ে মালামাল নিয়ে আর নেয়নি। এতে মনে হয়েছে সে আমার সাথে দুর্নীতি করেছে। আমি ঢাকা থাকার কারণে অভিযোগে আমি স্বাক্ষর করতে পারিনি। আমার এক ভাই স্বাক্ষর করেছে। তবে এ অভিযোগ আমারই করা।
একই গ্রামে জনি নামের এক ব্যক্তির নাম্বার অভিযোগপত্রে ব্যবহার করা হয়। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কোনো অভিযোগ করিনি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে এ ব্যাপারে হাসপাতাল থেকেও একদিন আমাকে ফোন দিয়েছিল।
অভিযুক্ত রজ্জব আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদীত। অভিযোগের বিষয়ে কোনোটার সাথেই আমার সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়াও এখানে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তৃতীয় কোনো অপশক্তি কাজ করছে। আমার বিরুদ্ধে ১০/১২ জন যুবক মানববন্ধন করেছে। এরা অনেকেই হরিরামপুরের বাইরে থেকে এসেছে। অভিযোগকারীর অনেকে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন না। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রণোদীতভাবে করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে। আমি আশা করছি, তদন্ত প্রতিবেদনে আমি নির্দোষ প্রমানিত হব।
মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মকছেদুল মোমিন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।