বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রাত্যহিক জীবনে আমরা নানা ডিভাইস ব্যবহার করে থাকি। এর মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্মার্টফোন। বর্তমানে পুরো বিশ্বের সাথে যুক্ত থাকতে হলে স্মার্টফোনের বিকল্প নেই বললেই চলে। কিন্তু এই স্মার্টফোনই অনেক সময় সমস্যার কারণ হয়ে উঠে। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রায়শই ব্যাঘাত ঘটায় আমাদের মনোযোগে, আর তাই বিঘ্ন ঘটে কাজে। তবে স্মার্টফোনের আসক্তি কাটিয়ে কাজে মনোনিবেশ করার বেশ কিছু উপায় কিন্তু রয়েছে। তাহলে চলুন উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক:
১। ফোনটিকে গ্রেস্কেল মোডে নিয়ে আসা
স্মার্টফোনের গ্রেস্কেল মোড অ্যাকটিভেট করে দিলে ডিসপ্লেতে সবকিছু সাদা ও কালো (ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট) রঙে দেখা যাবে। ফলে মনস্তাত্ত্বিকভাবেই ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সার্বিকভাবে স্মার্টফোন কম আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ব্যবহারকারীদের কাছে। স্বাভাবিকভাবেই ফোনে আসক্তিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। এছাড়াও অনেকেই মনে করেন, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ঘুমের যে ব্যাঘাত ঘটে সেটা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব গ্রেস্কেল মোডে ফোন ব্যবহার করলে।
যেভাবে স্মার্টফোনে গ্রেস্কেল মোড অ্যাকটিভেট করবেন:
আপনার স্মার্টফোনটি যদি অ্যান্ড্রয়েড ওএস ভিত্তিক ডিভাইস হয়ে থাকে তাহলে গ্রেস্কেল মোড চালু করতে হলে প্রথমে ‘সেটিংস’ থেকে ‘অ্যাকসেসিবিলিটি’ অপশনে যেতে হবে। এবার ‘কালার কারেকশন’ থেকে ‘গ্রেস্কেল’ অপশনটি সিলেক্ট করে দিতে হবে।
তবে আইফোনের মতো আইওএস ভিত্তিক ডিভাইসের ক্ষেত্রে আপনাকে ‘সেটিংস’ থেকে ‘অ্যাকসেসিবিলিটি’ হয়ে যেতে হবে ‘ডিসপ্লে এন্ড টেক্সট সাইজ’ অপশনে। এবার ‘কালার ফিল্টার’ থেকে সিলেক্ট করে দিতে হবে ‘গ্রেস্কেল’ অপশনটি।
এছাড়া ওয়ানপ্লাস ফোনের মতো অক্সিজেন ওএস ভিত্তিক ডিভাইসে গ্রেস্কেল চালু করতে হলে ডিসপ্লেতে সোয়াইপ ডাউন (উপরে থেকে নিচে) করে ‘কুইক সেটিংস’ প্যানেলটি ওপেন করতে হবে। এবার টোগোল করে ‘রিডিং মোড’ অ্যাকটিভেট করে দিতে হবে।
২। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসে স্ক্রিনটাইম লিমিট দিয়ে রাখা
স্মার্টফোন আসক্তির একটি বড় কারণ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসগুলো। এই যেমন ব্যবহারকারীদের অনেকেই কিছুক্ষণ পর পর ফেসবুকে টাইমলাইন স্ক্রল করেন, স্ট্যাটাস দিয়ে থাকেন। আবার অনেকে ইউটিউবে ভিডিও দেখে কাটিয়ে দেন দিনের বড় একটি সময়। ফলে কাজের ক্ষেত্রে এর বিরুপ প্রভাব পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসগুলোতে- বিশেষ করে যেগুলোতে আপনার অ্যাকাউন্ট আছে বা আপনি নিয়মিত ভিজিট করেন- স্ক্রিনটাইম লিমিট দিয়ে রাখা। অর্থাৎ, দিনের কতটুকু সময় আপনি কোন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে ব্যয় করতে ইচ্ছুক সেটা আগে থেকেই সেট করে দিতে পারেন। এতে করে এই অ্যাপসগুলোতে আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হবে না।
পূর্ব নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলে স্মার্টফোন আপনাকে সেটা জানিয়ে দিবে। অবশ্য স্মার্টফোনভেদে জানানোর প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। কখনও শুধু নোটিফিকেশন আসতে পারে, আবার কখনও নোটিফিকেশনের সাথে নির্দিষ্ট অ্যাপ লক বা ব্লক হতে পারে নির্দিষ্ট দিনের জন্য।
যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসে স্ক্রিন টাইম লিমিট করে দিবেন
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসগুলোতে ‘স্ক্রিন টাইম লিমিট’ সেট করা সম্ভব সেটিংস অপশন থেকে। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন হলে ‘সেটিংস’ থেকে ‘ডিজিটাল ওয়েলবিং এন্ড প্যারেন্টাল কনট্রোল’ অপশনে যেতে হবে। এবার স্ক্রিনে কোন অ্যাপে আপনি কতটা সময় কাটান তার একটি চিত্র দেখতে পাবেন। এর ঠিক নিচেই ‘অ্যাপ লিমিট’ অপশনে ট্যাপ করে অ্যাপের তালিকা থেকে কোন অ্যাপগুলোতে আপনি কতটা সময় কাটাতে চান সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারেন।
আইওএস ভিত্তিক আইফোন বা আইপ্যাডে স্ক্রিন টাইম সেট করে দিতে চাইলে ‘সেটিংস’ থেকে ‘স্ক্রিন টাইম’ হয়ে ‘অ্যাপ লিমিটস’ অপশনে যেতে হবে। এবার ‘অ্যাড লিমিট’ অপশনে গিয়ে নির্দিষ্ট অ্যাপগুলোতে আলাদা আলাদাভাবে কিংবা অ্যাপ ক্যাটাগরি অনুযায়ী ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। আইফোন
৩। ফেসলক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর পরিবর্তে লম্বা একটি পাসওয়ার্ড সেট করে দেওয়া
স্মার্টফোনের স্ক্রিনলক অপশন হিসেবে ফেসলক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট বেশ জনপ্রিয়। কেননা এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই কোনো প্রকার সময়ক্ষেপণ ছাড়াই স্মার্টফোনের হোম স্ক্রিনে প্রবেশ করতে পারেন। মূলত ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্যই ফেসলক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ফিচার দুটি নিয়ে আসে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
কিন্তু স্মার্টফোন আসক্তি কাটিয়ে উঠার বেশ কার্যকর একটি উপায় হচ্ছে এই দুটো ফিচার পরিহার করে স্ক্রিনলক হিসেবে লম্বা একটি পাসওয়ার্ড সেট করা। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মনস্তত্ব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লম্বা পাসওয়ার্ড সম্বলিত স্ক্রিনলক ব্যবহারকারীদের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠে। ফলে অবচেতন মনেই তারা স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে কোনো প্রকার প্রয়োজন ছাড়াই স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা কমে যায় বহুলাংশে।
যেভাবে সিকিউরিটি স্ক্রিনলক হিসেবে সেট করবেন লম্বা পাসওয়ার্ড
অপারেটিং সিস্টেম ও স্মার্টফোনভেদে স্ক্রিনলক সেট করার প্রক্রিয়াও ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে প্রচলিত স্মার্টফোনগুলোতে ‘সেটিংস’ থেকে ‘সিকিউরিটি’ বা ‘বায়োমেট্রিক্স এন্ড সিকিউরিটি’ অপশনে গেলে পাওয়া যায় ‘লক স্ক্রিন’ অপশনটি। এবার এখানে ‘পাসওয়ার্ড এন্ড সিকিউরিটি’ অপশনের মধ্যে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ ও ‘ফেস আনলক’ এর পাশাপাশি ‘স্ক্রিনলক’ অপশনটি। স্ক্রিনলকে ট্যাপ করে বড় একটি পাসওয়ার্ড সেট করে দিতে হবে।
৪। স্মার্টফোনে ডিএনডি (ডু নট ডিসটার্ব) মোড অন করে দেওয়া
কাজের সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন ডিএনডি বা ডু নট ডিসটার্ব মোড। এই মোডটি অ্যাকটিভেট করলে ডিভাইসের সকল নোটিফিকেশন মিউট হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ইনকামিং কল, নোটিফিকেশন মেসেজের সাউন্ড, মেসেজ ভাইব্রেশন, ভিজ্যুয়াল অ্যালার্টসহ সকল প্রকার সাউন্ড ও ভাইব্রেশন মিউট হয়ে যাবে।
যেভবে অ্যাকটিভেট করতে হয় ডিএনডি মোড
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ডিএনডি ফিচারটি চালু করতে হলে ডিসপ্লে স্ক্রিনে সোয়াইপ ডাউন (উপর থেকে নিচে) করতে হবে। এবার বেশ কিছু ফিচারের মধ্য থেকে ডিএনডি ফিচারটি খুঁজে নিয়ে তাতে ট্যাপ করলেই আপনার স্মার্টফোনে ডিএনডি মোড অ্যাকটিভেট হয়ে যাবে।
আইফোনের ক্ষেত্রে হোম স্ক্রিনে সোয়াইপ ডাউন করে ‘কনট্রোল সেন্টার’ ওপেন করতে হবে। এবার ফোকাস বাটনে ট্যাপ করে ‘ডু নট ডিসটার্ব’ অপশনটি সিলেক্ট করে দিতে হবে। উল্লেখ্য, ডিএনডি মোড থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও একই প্রক্রিয়ায় ডিএনডি অপশনে গিয়ে ট্যাপ বা ডিসিলেক্ট করে দিতে হবে।
৫। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া
যাদের স্মার্টফোন আসক্তির মূল কারণ সোশ্যাল মিডিয়া, তারা চাইলে সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখতে পারেন। বিশেষ করে অফিসে কাজের সময় বা পড়াশোনার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে এটি হতে পারে কার্যকর একটি উপায়। তবে পেশাগত কাজে প্রয়োজন হয় এমন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করা উচিত হবে না। যেমন কারো অফিসে ফাইল আদান-প্রদানে যদি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়া অন্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করা যেতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের নোটিফিকেশন যেভাবে বন্ধ করতে হয়
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ‘সেটিংস’ থেকে যেতে হবে ‘নোটিফিকেশন’ বা ‘নোটিফিকেশন এন্ড কনট্রোল সেন্টার’ সেকশনে। এবার ‘অ্যাপ সেটিংস’ বা ‘অ্যাপ নোটিফিকেশন’ অপশনটিতে ট্যাপ করলে স্ক্রিনে অ্যাপগুলোর তালিকা দেখা যাবে। এবার যে অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন আপনি বন্ধ করতে চাইছেন সেগুলোর পাশে ‘টোগল অফ’ করে দিতে হবে। ব্যস, এই অ্যাপগুলো থেকে আর কোনো নোটিফিকেশন আসবে না আপনার ফোনে স্ক্রিনে। একইভাবে যখন নোটিফিকেশন চালু করতে চান, অ্যাপের পাশে ‘টোগল অন’ করে দিতে হবে।