সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিএবি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিএবি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

বাপেক্সে আউট সোর্সিংয়ের লোক নিয়োগে মহাজালিয়াতির ঘটনার ঘটিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে নিজের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাপেক্সে আউট সোর্সিংয়ে লোক নিয়োগ দিতে “মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স লিমিটেড” নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩০০ টাকার জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ব্যবসায়ীক চুক্তি করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী বাপেক্স এমডির শেয়ার ৮০ শতাংশ আর প্রথম পক্ষ মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স লিমিটেডের শেয়ার মাত্র ২০ শতাংশ। চুক্তিপত্রের ৩ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও সুনাম, আর পুরো পুঁজি বিনিয়োগ করবে দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ মোহাম্মদ আলী। অর্থাৎ মন্ডল ট্রেডার্সের শুধু লাইসেন্স ব্যবহৃত হচ্ছে। কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে বিনিয়োগ সবকিছুই মোহাম্মদ আলীর।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিএবি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

 

চুক্তির কোথাও দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে মোহাম্মদ আলীর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় উল্লেখ করা হয় নি। তার পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা এনআইডি নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। বাপেক্সের অফিসিয়াল কাগজপত্রে স্বাক্ষরের সঙ্গে ওই স্বাক্ষরে হুবহু মিল দেখা গেছে।

গত ৭ মার্চ তারিখে ওই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তিতে দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষর করেছেন। প্রথম পক্ষ হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন মন্ডল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এটিএম ফিরোজ মন্ডল। অভিযোগ উঠেছে তারা দুজনেই একই ভবনের বাসিন্দা।

এটিএম ফিরোজ মন্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা ওই চুক্তির বিষয়ে কিছুই জানি না। ওই চুক্তিটি ভূয়া। সেখানে আমাদের কোন সিলও নেই, স্বাক্ষরও নেই। কে বা কাহারা এটি তৈরি করেছে। আমরা অলরেডি থানায় জিডি করেছি। বাপেক্সে কাজ পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমরা একটি টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলাম, সেখানে নির্বাচিত হয়েছি, এখনও কোন চিঠিপত্র পাইনি।

একই ভবনের বাসিন্দা হওয়া কথাও সত্যি নয় বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, বাপেক্স এমডির সঙ্গে সম্ভববত আমার মাত্র একবার দেখা হয়েছে। তিনি কোথায় থাকেন আমি জানি না। আমি নিজে থাকি জিগাতলা এলাকায়।

বাপেক্সের লোকবল নিয়োগকে সামনে রেখে ওই চুক্তি সম্পাদিত তা পরতে পরতে প্রমাণ রয়েছে। চুক্তির ২ নম্বর শর্তে ব্যবসার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে, ”আউটসোর্সিং ভিত্তিতে কোম্পানির লোকবল সরবরাহ, পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানি বাপেক্স এর সহিত চুক্তি অনুযায়ী আইনানুগ রূপে অবসান না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা চলিবে।


ওই চুক্তি যখন সম্পাদিত হয় তখন বাপেক্সের একটি টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন ছিল। চুক্তিতে প্রথম ধাপে সেই টেন্ডারের (TENDER NO. BSPEX/LOCAL PURCHASE/OSTETM/19-2021-2022, DATED 23-02-2022 ENGAGEMENT OF OUT-SOURCING MANPOWER FORM LOCAL SERVICE PROVIDER FOR BAPEX HEAD OFFICE AND CHATTOGRAM REGIONAL OFFICE.) উল্লেখ করা হয়েছে। বাপেক্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ড্রাইভারসহ বেশি কিছু স্টাফ নিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। অনেক দিন ধরেই ওই কোম্পানিটির বিষয়ে কানাঘুষা চলছিল। এবার তাদের চুক্তির কপি প্রকাশ হয়ে পড়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ব্যবসা যে খোদ এমডির তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে করে তিনি চাকরীর শর্ত ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনেকেই বলেছেন, বাপেক্স এমডি বর্তমানে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। আগামী এপ্রিল মাসে তার চুক্তির মেয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে। চাকরী শেষ হতে চলায় বেশ নগ্নভাবেই ঘুষ লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছেন। ওই চুক্তিটি একটি সামান্য নজির মাত্র। আরও বড় বড় লুটপাটের ঘটনা রয়েছে। বাপেক্সের স্বার্থ নয়, ব্যক্তি স্বার্থই তার কাছে মূখ্য বিষয়।

না হলে বাপেক্স কেনো নিজে কমদামে কামলা খাটছে। আর নিজের কূপ বেশি দর দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে করাচ্ছে। বাপেক্স সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির কূপ টেন্ডার নিয়ে ৬৭ কোটি টাকায় খনন করে দিচ্ছে। তখন তার নিজের প্রতিটি কূপ (শাহবাজপুরে) খননে গ্যাজপ্রমকে দিচ্ছে ২০০ কোটি টাকার উপরে। গ্যাজপ্রমের সঙ্গে সম্প্রতি তিনটি কূপ খননের চুক্তি করা হয়েছে। এ জন্য বাপেক্সকে দিতে হবে ৬৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার (প্রতিটি ২১.৫ মিলিয়ন ডলার)। দু’একজন কর্মকর্তা এতে আপত্তি তোলার চেষ্টা করলেও মোহাম্মদ আলীর চাপে নিবর হয়ে গেছেন। আপত্তি উত্তাপনকারীদের বলা হয়, এটি উপর থেকে আদেশ এসেছে। ফাইলে সই না দিলে করুন পরিণতি ভোগ করতে হবে। শেষ পর্যআন্ত গ্যাজপ্রমের সেই প্রস্তাব অবিকল অনুমোদন হয়েছে।


বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, আগের কূপগুলোর চেয়ে এবারের তিনটি কূপের গভীরতাও কম। স্বাভাবিকভাবেই এবার দর কমে যাওয়ার কথা। উল্টো বেশি হওয়াটা খুবই বিষ্ময়কর। গ্যাজপ্রম শাহবাজপুর কূপ-৩ ও কূপ-৪ খনন করেছে। এগুলোর গভীরতা ছিল ৪ হাজার মিটার। আর প্রস্তাবিত তিনটি কূপের গভীরতা হবে প্লাস-মাইনাস ৩৪৫০মিটার। প্রায় ৫০০ মিটার গভীরতা কমলেও দর বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। প্লাস-মাইনাস ৩৪৫০ মিটার গভীরতায় শাহবাজপুর ইস্ট ও ভোলা নর্থ কূপ খননে প্রতিটির জন্য প্রেমেন্ট দেওয়া হয়েছে ১৫.৮ মিলিয়ন ডলার। তখনকার সেই দরেই চরম সমালোচিত হয়েছে। বাপেক্স নিজে করলে এর অধের্কের কম খরচে এই কূপ খনন করতে পারে। আর এসব কূপ এখন খনন করার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না কেউ। ভোলায় গ্যাসের চাহিদা না থাকায় আগের করা ৩টি কূপ বসে রয়েছে। সেখানে কেনো অগ্রিম বিনিয়োগ করা হচ্ছে তাও কারো বোধগম্য নয়। গ্যাজপ্রমকে চড়াদরে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাপেক্স এমডির অতি উৎসাহী মনোভাব দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষ্যণীয়। এসব কাজের পেছনে বড় ধরণের কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ অনেক পুরনো।

দেশ যখন গ্যাস সংকটে নাকাল অবস্থা। সেই সময়ে প্লেজার ট্রিপে রাশিয়া সফর করছেন বাপেক্স এমডি।

বাপেক্স এমডি মোহাম্মদ আলীকে একাধিক দিনে একাধিক দফায় ফোন ও হোয়ার্টসঅ্যাপে কল দেওয়া হয়। সাড়া না পেয়ে এসএমএস দিলেও সাড়া দেন নি।

Scroll to Top