ভাল্লেত্তা, ০১ আগস্ট – মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলে রাষ্ট্রভিত্তিক স্বীকৃতির প্রবণতা বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপের আরেকটি দেশে মাল্টা ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে।
মাল্টার ঘোষণা আসে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে, যেখানে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার কুতাজার জানান, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে মাল্টা দায়বদ্ধ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে আসছে মাল্টা, আর তাই এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
একই দিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে জানান, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে তার দেশ। তবে এই স্বীকৃতির জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, সেটি হলো- ফিলিস্তিনে ২০২৬ সালের মধ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে, যেখানে হামাস অংশ নিতে পারবে না ও ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অস্ত্রহীন হতে হবে।
মাল্টা ও কানাডার এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সঙ্গে একাত্মা প্রকাশ করতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যও। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও শান্তির রূপরেখায় রাজি না হয়, তাহলে যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
এইসব ঘোষণায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর সংখ্যা ১৪৫ ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে অন্তত এক ডজন ইউরোপীয় দেশ রয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের স্থায়ী প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেন, এই স্বীকৃতি আসলে সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করার মতো ব্যাপার। তিনি দাবি করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে তা চরমপন্থা উৎসাহ দেবে।
অন্যদিকে, মাল্টার প্রতিনিধি কুতাজার বলেন, এটা কোনো প্রতীকি পদক্ষেপ নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
জাতিসংঘে আয়োজিত এই তিনদিনের সম্মেলনে বিশ্বের ১২৮টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। শেষ দিনে ‘নিউইয়র্ক কল’ নামের একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, যেখানে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এই বিবৃতিতে ১৫টি পশ্চিমা দেশ স্বাক্ষর করেছে।
সবশেষে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে জানান, সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাবনাপত্র তৈরি করা হয়েছে, যা জাতিসংঘের সদস্যদের কাছে পাঠানো হবে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে তা অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ বছরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বড় ধরনের কূটনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি আরও কয়েকটি বড় দেশ এই পথ অনুসরণ করে, তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে।
সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ০১ আগস্ট ২০২৫