প্রথম ম্যাচে ভারত, দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয়; রাজকোটে তাই তৃতীয় ম্যাচ রূপ নেয় অঘোষিত ফাইনালে। সেই ম্যাচে সুরিয়াকুমার যাদবের তান্ডবে ৯১ রানের বিশাল জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ভারত। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সুরিয়াকুমার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চার-ছক্কার ঝড় তুলে ৫১ বলে খেলেন ১১২ রানের দানবীয় ইনিংস। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২২৮ রানের পাহাড়সম পুজি পায় ভারত।
রাজকুটে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থা স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় ভারত। প্রথম ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ বলেই প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা, ইশান কিশানকে (১) ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম উইকেট এনে দেন দিলশান মাদুশাঙ্কা।
কিশানের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন রাহুল ত্রিপাঠী, অভিষেক ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও এই ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠেন তরুণ এই ব্যাটার। উইকেটে এসেই হাত খুলে মারতে থাকেন রাহুল, ওপেনার শুবমান গিলের সাথে মাত্র ৩১ বলে গড়েন ৪৯ রানের জুটি। যেখানে রাহুল মাত্র ১৬ বলে যোগ করেন ৩৫ রান। ব্যাটিংয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠার আগে রাহুলকে ফিরিয়ে লঙ্কান শিবিরে স্বস্তি ফেরান করুণারত্নে।
তবে রাহুলকে ফেরানোর সেই সুখ লঙ্কানদের জন্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সুরিয়াকুমার যাদব চারে খেলতে নেমে লঙ্কান বোলারদের রাতের ঘুম হারাম করে দেন এক নিমিষেই। উইকেটে এসেই চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটান সুরিয়াকুমার, ২৬ বলে ৪ বাউন্ডারি এবং ৩ ছক্কায় করেন ফিফটি।
ফিফটির পর আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন সুরিয়া, মাত্র ৪৯ বলে শতরানের জুটি গড়েন শুবমান গিলের সাথে। যেখানে ব্যাট হাতে একাই লঙ্কান বোলারদের শাসন করেন সুরিয়াকুমার, শতরানের সেই জুটিতে সুরিয়ার অবদান ৩৪ বলে ৭৭ রান। গিলের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। শতক পেরিয়ে সেই জুটি থামে ১১১ রানে, গিলকে ৪৬ রানে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। এরপর ক্রিজে আসা হার্দিক পান্ডিয়াকে দ্রুত ফেরান রাজিথা। ১৭৪ রানের মাথায় ৪র্থ উইকেট হারায় ভারত।
তবে সেটা স্বাগতিকদের জন্য তেমন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেনি, সুরিয়াকুমার উইকেটে থাকায়। তার কচুকাটা ব্যাটিংয়ে মাত্র ১০৮ বলে ২০০ পার করে ভারত। ২৬ বলে ফিফটি করা সুরিয়া সেঞ্চুরিতে পৌছে যান মাত্র ৪৫ বলে। শেষ ৫০ রান করতে সুরিয়া বল খেলেন মাত্র ১৯টি। ৪৫ বলে ৬ বাউন্ডারি এবং ৮ ছক্কায় সেঞ্চুরি করা এই ডানহাতি ব্যাটার মাঠ ছাড়েন ৫১ বলে ৭ বাউন্ডারি এবং ৯ ছক্কায় ১১২ রানে অপরাজিত থেকে।
সুরিয়াকুমারের সাথে ২০ বলে ৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ভারতের সংগ্রহ ২২৮ এ নিতে আক্সার প্যাটেলের ৯ বলে সময় উপযোগী ২১ রানের ইনিংসেরও ভূমিকা কম নয়। সুরিয়া-আক্সারের ব্যাটে চড়ে ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ২২৮ রানের বড় পুঁজি পায়। শ্রীলঙ্কার হয়ে ২টি উইকেট শিকার করেন দিলশান মাদুশাঙ্কা। একটি করে উইকেট পান রাজিথা ও করুনারত্নে।
ভারতের ২২৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিস এবং পাথুম নিসাঙ্কার ৪৪ রানের জুটিকে দুর্দান্ত শুরুই বলা যায়। আক্সার প্যাটেল ও আর্শদীপ সিং পাঁচ বলের ব্যবধানে কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিসাঙ্কাকে ফেরালে শুরুর সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি লঙ্কানরা। পরের ওভারে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ব্যক্তিগত ১ রানে আভিষ্কা ফার্নান্দোকে ফেরালে ৫১ রানেই তিন উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় লঙ্কানরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পর সবচেয়ে বড় যে জুটি সেটা হয় তাও ৩৩ রানের বেশি নয়। ৩৪ রানের সেই জুটি ভাঙার পর আর ম্যাচেই ফিরতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
এরপর হার্দিক পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল আর উমরান মালিক মিলে মাত্র ১৬.৪ ওভারে লঙ্কানদের উড়িয়ে দেন ১৩৭ রানে। ওপেনার মেন্ডিসের (২৩) পর লঙ্কান ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৩ রান আসে অধিনায়ক দাসুন শানাকার ব্যাট থেকে। ভারতের হয়ে ২.৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন আর্শদীপ শিং। এছাড়া ২টি করে উইকেট পান হার্দিক পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল ও উমরান মালিক।
৫১ বলে ১১২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের সুরিয়াকুমার যাদব।
সিরিজ জুড়ে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ক্রিকেটশৈলী প্রদর্শনে সিরিজ সেরা হয়েছেন আক্সার প্যাটেল। তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে তার রান ছিল ৩১*, ৬৫, এবং ২১*। বল হাতে অবশ্যই তেমন বেশি উইকেট না পেলেও আঁটসাঁট বোলিংয়ে রান আটকে দিয়েছেন ঠিকই। প্রথম ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ২৪ রানে নেন ২ উইকেট। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আবার কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে ভেঙেছেন ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।