সিলেট, ০১ জুন – টানা বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের চার উপজেলায় জলাবদ্ধতা অপরিবর্তিত রয়েছে। নগরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন। বৃষ্টি থামায় পানি নামলেও আতঙ্কে সময় পার করছেন বাসিন্দারা। যে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (১ জুন) কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুন্নাহার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। আবহাওয়া স্থিতিশীল হলে এটি খুলে দেওয়া হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি আরও বেড়েছে। ৪টি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। সেগুলো হচ্ছে, কানাইঘাট, আমলসীদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ। সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে থাকলেও সময়ে সময়ে বাড়ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, শনিবার (৩১ মে) সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টির হিসাবে চলতি বছর এটাই সর্বোচ্চ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বাগবাড়ি, ওসমানী মেডিকেল, সাগরদিঘিরপার, চৌকিদেখি, যতরপর, উপশহর, মেজরটিলা এলাকাসহ অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, রোববার বিকেল ৩টায় সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা শনিবার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা শনিবার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ১৮৭ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।
সিলেট পয়েন্টে সুরমা বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও এ পয়েন্টেও পানি দ্রুত বাড়ছে। সকাল ৯টায় এ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুটো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদনদীর পানিও বাড়ছে।
নগরীর উপশহরের বাসিন্দা গৃহিণী শিমলা আক্তার জানান, রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় তারা সকালের রান্নাবান্না করতে পারছেন না। শনিবারও একইভাবে তাদের রান্নাঘর তলিয়ে গিয়েছিল। এতে তারা প্রচণ্ড ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মিরাবাজারে বাসিন্দা জুঁই দাস বলেন, শনিবার রাত থেকে জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। আমরা খুব কষ্টে রাত-দিন পার করছি। সময়মতো যদি নদী পরিস্কার করা হতো তাহলে আমরা ভোগান্তিতে পড়তাম না।
আখালিয়ার শফিক মিয়া বলেন, দুদিন থেকে আমাদের এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে আমার ঘরে পানি ঢুকে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। সিটি করপোরেশন যদি সময় মতো ছড়া-খাল ও নদী পরিস্কার না করে তাহলে আমাদের ভোগান্তি কমবে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি কয়েক ঘণ্টা জমে থাকে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও দ্রুত সরে যায়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, শনিবার থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করেছি। অধিক বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা ও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কলেজ ভবন ও হোস্টেল নিচু থাকায় কিছু সময়ের জন্য পানি ঢুকেছে।
তিনি জানান, বন্যা মোকাবিলার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সর্ব্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সূত্র: কালবেলা
আইএ/ ০১ জুন ২০২৫