মৌলিক সংখ্যার পরিমাণ অসীম, কোনো শেষ নেই। তাই প্রতিনিয়ত মানুষ আরও বড় মৌলিক সংখ্যা খুঁজে চলেছে। পাওয়াও যাচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মৌলিক সংখ্যা। প্রতিটাই আগের চেয়ে বড়। একটা ফ্রি সফটওয়্যারের সাহায্যে এবারের মৌলিক সংখ্যাটা খুঁজে পেয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী লুক ডুরান্ট। তিনি পুরস্কার হিসেবে পাবেন সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি!
সম্প্রতি নতুন এক মৌলিক সংখ্যার সন্ধান মিলেছে। ৩৬ বছর বয়সী গবেষক এবং গ্রাফিকস কার্ড ও এ ধরনের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার সাবেক কর্মী লুক ডুরান্ট এই মৌলিক সংখ্যাটি খুঁজে পেয়েছেন গত ১২ অক্টোবর। তাঁর পাওয়া সংখ্যাটি আসলেই মৌলিক কি না, তা নিশ্চিত করা হয়েছে ১৯ অক্টোবর।
আলাদাভাবে অনেকবার এই সংখ্যার মৌলিকত্ব যাচাই করা হয়েছে। ডুরান্টের মৌলিক সংখ্যাটা আসলেই মৌলিক এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়! সংখ্যাটি হলো ২১৩৬২৭৯৮৪১ -১। এটি একটি মার্সেন প্রাইম সংখ্যা। (মার্সেন প্রাইম কী, সে আলোচনায় একটু পরে আসছি।) নাম দেওয়া হয়েছে ‘এম১৩৬২৭৯৮৪১’।
দেখতে সহজ মনে হলেও সংখ্যাটা বিশাল বড়। নতুন এই মৌলিক সংখ্যায় ৪ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৩২০টি অঙ্ক (ডিজিট) আছে। এমন সংখ্যা খুঁজে বের করাও কঠিন! কম্পিউটার ছাড়া তো সম্ভবই নয়। ডুরান্ট এই সংখ্যা খুঁজে পেয়েছেন গ্রেট ইন্টারনেট মার্সেন প্রাইম সার্চ বা গিম্পস (GIMPS)-এর সাহায্যে। গিম্পস একটা কম্পিউটিং প্রজেক্ট সফটওয়্যার।
এটি মার্সেন প্রাইম খুঁজতে সাহায্য করে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী মিলে ১৯৯৬ সালে এই সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন শুধু মার্সেন প্রাইম খুঁজতে। সর্বশেষ খুঁজে পাওয়া ১৮টি মার্সেন প্রাইমই এই সফটওয়্যারের সাহায্যে পাওয়া গেছে। নতুন এই মৌলিক সংখ্যার আগে যেটি সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা ছিল, তা ছিল প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ অঙ্ক বা ডিজিটের।
নতুন এই মৌলিক সংখ্যা খুঁজে পাওয়ায় ডুরান্টকে ৩ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্যমান প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ। ডুরান্ট এই টাকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা স্কুল অব ম্যাথেমেটিকস অ্যান্ড সায়েন্সের গণিত বিভাগে দান করবেন।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘সত্যিই উত্তেজনাপূর্ণ একটা ব্যাপার ছিল। অনেক শ্রম দিয়ে অবশেষে অনন্য এ সংখ্যা খুঁজে পেয়েছি। এটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা। ভাবতে বেশ ভালো লাগছে।’
এবার ছোট করে মার্সেন প্রাইম সম্পর্কে জানা যাক। বর্তমানে মৌলিক সংখ্যা খুঁজে পাওয়া মানেই যেন মার্সেন প্রাইম। আগেই বলেছি, গিম্পস পদ্ধতি ব্যবহার করে সবশেষ ১৮টি মৌলিক সংখ্যা খুঁজে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, এককথায় এখন মৌলিক সংখ্যা মানেই মার্সেন মৌলিক সংখ্যা।
মৌলিক সংখ্যা কী, তা নিশ্চয়ই জানেন। কোনো সংখ্যাকে ১ এবং ওই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা না গেলে তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন ৫, ৭, ১১ ইত্যাদি। এসব মৌলিক সংখ্যার বেশ কিছু ধরন আছে। প্রাণীদের যেমন নানা প্রজাতি থাকে, অনেকটা তেমন। এর মধ্যে একটার নাম মার্সেন প্রাইম বা মার্সেন মৌলিক সংখ্যা।
২-এর মৌলিক ঘাত বা পাওয়ার, এমন কোনো সংখ্যা থেকে ১ বিয়োগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তা-ই মার্সেন প্রাইম। সংজ্ঞাটা বোধ হয় একটু কঠিন হয়ে গেল। এটাকে গাণিতিকভাবে লেখা হয়, ২ক (মৌলিক) – ১। একটু ব্যাখ্যা করলে আরও স্পষ্ট হবে। ৩১ একটি মৌলিক সংখ্যা। একে ২ক (মৌলিক) – ১ আকারে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ ৩১ হলো ২৫ – ১ = ৩২ – ১ = ৩১। আর ২৫ = ২ × ২ × ২ × ২ × ২ = ৩২। এখানে, বলা বাহুল্য, ২-এর পাওয়ার বা ঘাত ৫ একটি মৌলিক সংখ্যা।
তবে সব সময় ২-এর পাওয়ার মৌলিক হলেও সংখ্যাটা মৌলিক হয় না। যেমন ১১ একটি মৌলিক সংখ্যা। ২-এর পাওয়ার ১১ করলে হয় ২১১ = ২০৪৮। এ থেকে ১ বিয়োগ করলে হয় ২০৪৭, যা মৌলিক সংখ্যা নয়। ২৩ ও ৮৯ গুণ করলে হয় ২০৪৭। অর্থাৎ এই সংখ্যাটি ২৩ ও ৮৯ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। ফলে দেখা যাচ্ছে, সব মার্সেন প্রাইম সংখ্যা আসলে মৌলিক নয়। তবে, যেমনটা আগেই বললাম, বর্তমানের সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা মানেই যেন মার্সেন প্রাইম!