সংঘবদ্ধ চক্রের ফাঁদ: জমির মালিককেই ভূমিদস্যু আখ্যা | চ্যানেল আই অনলাইন

সংঘবদ্ধ চক্রের ফাঁদ: জমির মালিককেই ভূমিদস্যু আখ্যা | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের আমতলী এলাকা। প্রায় ২০ বছর আগে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ৩৫ বিঘা জায়গা কিনেন নাজমুল ইসলাম। এরপর থেকে নিয়ম অনুযায়ী নামজারি ও খাজনা পরিশোধ করে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ ও ভোগদখল করছিলেন তিনি।

কয়েক বছরের মাথায় ২০০৬ সালে স্থানীয় বনবিভাগ অভিযোগ করে, নাজমুল ইসলামের জমিতে রয়েছে বনের জায়গা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনের উদ্যোগে জরিপ ও স্কেচম্যাপ তৈরি করে, ওই জমি বনের অন্তর্ভুক্ত নয়, মর্মে ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

বছর না ঘুরতেই ২০০৭ সালে রায়ের বিরূদ্ধে আপিল করে বন বিভাগ। সকল তদন্ত ও পর্যালোচনা শেষে, ওই জমি বনের বিজ্ঞপ্তি বহির্ভুত রাখার আদেশ বহাল রাখার পাশাপাশি বনের পক্ষ থেকে করা আপিল আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

নাজমুলের অভিযোগ, ২০১৭ সালে মোটা অংকের ঘুষ চেয়ে না পেয়ে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাকে হয়রানি করেন বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা। প্রতিকারের জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে, জমি সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নাজমুল ইসলামের পক্ষে স্ট্যাটাস কো ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে উচ্চ আদালত।

GOVT

জমি নিয়ে বিড়ম্বনার এখানেই শেষ নয়। নাজমুল ইসলাম প্রবাসে থাকার সুযোগে ভূমিদস্যু চক্রের নজর পরে জমিতে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ২০২২ সালে বনের বিট কর্মকর্তার যোগসাজোশে ব্যক্তি মালকানার জমি দখলের পায়তারা করে চক্রটি।

অভিযোগ রয়েছে, বনের জমি উদ্ধারের নামে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে নাজমুলের জমিতে অভিযান পরিচালনা করেন, হবিরবাড়ী বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খান। জমির মালিকের অনুপস্থিতিতে তাকে ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে, তারই জমিতে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে জবরদখলের পায়তারা চালিয়ে যায় চক্রটি। তারই অংশ হিসেবে, বারবার হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যাওয়া, মারধর করে কেয়ারটেকারদের তাড়িয়ে দেয়া কিংবা নিরাপত্তা গেট ভেঙে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলার মতো কর্মকাণ্ডে দিশেহারা নাজমুল।

অনুসন্ধান বলছে, ওই জমি জবরদখলের জন্য বন বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ও ভুমিদস্যু চক্রের মাঝে কোটি টাকার চুক্তি হয়। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করা, বেপরোয়া চক্রকে থামাতে বিগত সরকারের আমলে ভালুকা মডেল থানায় অন্তত ৬ বার অভিযোগ করলেও প্রভাবশালী ওই চক্রের বাধায় আইনগত কোন সহযোগিতা পাননি ভুক্তভোগী।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনিক পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোটা টাকার বিনিময়ে ভূমিদস্যুদের নামে-বেনামে লিজ দেয় বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম।

অন্যদিকে দেশে রাজনৈতিক পালাবদলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি নাজমুলের। সম্প্রতি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে আবারও সক্রিয় হয়েছে ভূমিদস্যু চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় জবর দখলের উদ্দেশ্যে, নাজমুল ইসলামের জমির কেয়ারটেকারসহ তিনজনকে অপহরণ করে দস্যু চক্র। ৩ ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মুক্তি মিলে তাদের।

এই ঘটনায় বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। সেনাবাহিনীর কাছে করা অভিযোগে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

তথ্য বলছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে দেশজুড়ে সক্রিয় হয়েছে শতাধিক ভূমিদস্যু চক্র। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের জোগসাজোসে জারি রয়েছে তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড।

shoroterjoba

Scroll to Top