শোভাযাত্রায় রয়েছে ‘পানি লাগবে পানি’সহ সুলতানি ও মুঘল আমলের মোটিফ | চ্যানেল আই অনলাইন

শোভাযাত্রায় রয়েছে ‘পানি লাগবে পানি’সহ সুলতানি ও মুঘল আমলের মোটিফ | চ্যানেল আই অনলাইন

‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হওয়া বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ভিন্নতা দেখা গেছে। শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, এর সঙ্গে দেখা গেছে জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মরণে ‘পানি লাগবে পানি’ মোটিফ।

আজ সোমবার সকাল ৯টায় বের হওয়া এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

শোভাযাত্রার জন্য বানানো বাঁশের বেত-কাঠ দিয়ে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে এক দুর্বৃত্ত পুড়িয়ে দেওয়ার পর এটি আবার নতুন করে বানিয়েছে চারুকলার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

শোভাযাত্রায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’ রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। তবে পরিবারের অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রশাসন। আবু সাঈদের প্রসারিত দুইহাত না থাকলেও আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে মুগ্ধের প্রতীকী পানির বোতল। এটি দ্বারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন দেওয়া শহীদদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

এবারের আনন্দ শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশের ১৮টি ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ঘোড়া আনা হয়েছে। সুঠাম দেহের এসব ঘোড়া আনন্দ শোভাযাত্রার সামনে হেঁটেছে।

এছাড়াও এবারের শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পালকি রয়েছে। এ বছর ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে। তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

বড় মোটিফের পাশাপাশি এ বছর মাঝারি মোটিফ রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস রয়েছে।

এছাড়া ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল এবং মাছের ডোলা। এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে।

পটচিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ১৯৫২ ও ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, বেহুলা লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীরপট আঁকা হয়েছে। প্রত্যেকটি চিত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বাঘ এবং বাঘের রং। এর আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা তবে ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা। তবে এবার বর্ষবরণের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম বদলে রাখা হয় বর্ষবরণের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’।

Scroll to Top