শেষ হলো সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব

শেষ হলো সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট

সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতার দ্বাদশ আসর শেষ হয়েছে। ‘কণ্ঠ ছেড়ে গান গেয়ে, কণ্ঠরোধের সব কালাকানুন ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার’ প্রত্যয় নিয়ে উৎসবটির আয়োজক বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।শনিবার (৯ মার্চ ) বিকাল ৫টায় উৎসবের দ্বিতীয় ও সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানমালা আয়োজিত হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে।

এদিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শহিদদের প্রতি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর উদীচী সঙ্গীত বিভাগের সমবেত পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। তারা পরিবেশন করে─’মারো জোয়ান হেইয়ো’, ‘তুমি মানুষ আমি মানুষ সকল এক মায়ের সন্তান’ এবং ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান’ গান তিনটি।

শেষ হলো সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি এবং দ্বাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম। এরপরই দ্বাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট এবং সনদপত্র তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

এবারের প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে প্রথম হয়েছে শ্রেয়া রায়, দ্বিতীয় হয়েছে তীর্থ বিশ্বাৈোস এবং যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে রাহুল দেবনাথ ও সায়রা খান শুকরিয়া। ‘খ’ বিভাগে দেশসেরা হয়েছে তনুশ্রী পাল, দ্বিতীয় হয়েছে অনুশ্রী শর্মা এবং তৃতীয় হয়েছে রাহমিম ইয়াসরীব সামিন।

‘গ’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইমন দাস, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ এবং তৃতীয় হয়েছেন অলি উল্লাহ। এছাড়া, দলীয় অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে দেশসেরা হয়েছে উদীচী নোয়াখালী জেলা সংসদ, দ্বিতীয় উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে খুলনার সৃজনী সংগীত একাডেমি। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং দ্বাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব, সঙ্গীতা ইমাম।

এরপরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করে শ্রেয়া রায়, তীর্থ বিশ্বাৈোস, তনুশ্রী পাল, অনুশ্রী শর্মা, রাহমিম ইয়াসরীব সামিন, ইমন দাস, জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ এবং অলি উল্লাহ। এছাড়া, আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে একক সঙ্গীত পরিবশন করেন প্রলয় সাহা। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে আমন্ত্রিত দল বহ্নিশিখা এবং চারণ-এর শিল্পীরা। এছাড়াও, ছিল উদীচী নোয়াখালী জেলা সংসদের সমবেত পরিবেশনা। সব শেষে উদীচীর দ্বাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতার সমাপনী ঘোষণা দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কংকন নাগ।

এর আগে, উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবার (৮ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। জেলা পর্যায় শেষে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করে বিজয়ী হয়ে সারাদেশ থেকে আসা প্রায় তিনশ’ শিল্পী দিনভর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তিনটি একক এবং একটি দলীয়- মোট চারটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রথীন্দ্রনাথ রায়। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। এসময় জাতীয় সঙ্গীত ও সংগঠন সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এরপর রথীন্দ্রনাথ রায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করার সাথে সাথেই ঢাকা-ঢোলের বাদনে নৃত্যের তালে তালে উল্লাসে মাতেন সারাদেশ থেকে আসা উদীচীর শিল্পী-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন উদ্বোধক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা। উদ্বাধক এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। ফুল, উপহার ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। আলোচনা পর্ব শেষে উদীচীর গণসঙ্গীতের স্বরলিপির বই “দ্রোহের গান”-এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। উদীচীর কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিভাগের উদ্যোগে প্রকাশিত বইটিতে স্থান পেয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যেন সেন, মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদারসহ বিভিন্ন জনের লেখা ও সুর করা ২২টি উল্লেখযোগ্য গণসঙ্গীত। এসব গানের স্বরলিপি তৈরি করেছেন মাহমুদ সেলিম এবং পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল।

সারাবাংলা/এজেডএস

Scroll to Top