শূকরের দল নিয়ে পথে পথে কাটে যাযাবর জীবন

শূকরের দল নিয়ে পথে পথে কাটে যাযাবর জীবন

চারদিকে কতো বিচিত্র পেশা মানুষের। জীবন জীবিকার তাগিদে কতো কিছুই না করে মানুষ। এমনি এক বিচিত্র পেশা হচ্ছে শূকর পালন। যাযাবর জীবন নিয়ে শূকরের পাল নিয়ে ছুটছে এক জেলা থেকে আরেক জেলা৷ অনেকটা এমন যে, যেখানেই রাত সেখানেই কাইত। মাসের পর মাস চলে যায় পথে পথে।

গ্রীষ্মের তীব্র রোদ আর শরৎকালের হঠাৎ বৃষ্টি, হেমন্তের দক্ষিণা ঝিরঝির বাতাস। পৌষ-মাঘ মাসে হাঁড় কাঁপানো প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা তীব্র ঠান্ডা এবং বসন্তকালে কোকিলের কুহু কুহু ডাক। বছরের বারোটা মাস আর সব ঋতুতেই পথে পথে এক বিচিত্র জীবন-জীবিকা ওদের।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে দেখা মেলে কয়েকটি শূকরের পাল নিয়ে চড়ে বেড়ানো দলের সাথে। তিনটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা।

শূকরের দল নিয়ে পথে পথে কাটে যাযাবর জীবন

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মালিকের সাথে মাসিক দশ থেকে পনেরো হাজার টাকার চুক্তি করে সারা বছর পরিবার ছেড়ে শূকরের পাল নিয়ে পথে পথেই যাযাবর জীবন কাটাতে হয়। রান্নার কাজ নিজেরাই করেন। যেখানে রাত হয় সেখানেই তাবু ফেলা হয়। বাড়িতে কোনো দুর্ঘটনার খবর পেলেই তবে পরিবারের কাছে ছুটে যাওয়া হয়ে ওঠে। তা না হলে চুক্তিবদ্ধ সময় শেষে বছর ঘুরে খুব অল্প সময়ের জন্য যাওয়া হয় বাড়িতে। সারা বছরে হাতেগোনা কয়েকবার দেখা হয় স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবার সঙ্গে। লোকালয় থেকে দূরে তাদের থাকতে হয় কারণ মানুষের সমস্যা হতে পারে তাই৷ এমন ভাসমান জীবন তাদের।

অদ্ভুত ও বিচিত্র জীবন জীবিকা সম্পর্কে কথা হয় তাদের সাথে। তাদের তিনটি দল৷ প্রতিটি দলে তিরিশটি শূকর। তিনটি দলে মা শূকর ও বাচ্ছা মিলিয়ে তিন শতাধিক রয়েছে। এসময় কথা হয় এক কর্মচারীর সাথে। নিতাই দাস (৩৫) বলেন, ৮ জনের দল নিয়ে নেএকোনার কেন্দুয়া আঠারোবাড়ি থেকে এসেছি। মালিকের হয়ে কাজ করছি । যখন টাকা প্রয়োজন হয় মালিকের থেকে চেয়ে নেই৷ এগুলো বড় হলে কেনা-বেচা হয়।

তিনি জানান, তাদের পরিবারে স্ত্রী এবং স্কুল পড়ুয়া ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। নিতাই এর সাথে থাকা এ পেশায় জড়িত সব কর্মচারীর জীবন-জীবিকা একই রকম।


দুলাল দাস বলেন, ‘গরিব মানুষ, টাকা পয়সা নাই, পড়াশোনা করতে পারিনি। কেউ ভালো কাজ দেয়নি, অবশ্য চেষ্টাও করিনি কোনো দিন অন্য কাজের।’

সন্তানদের কি এ পেশায় আনবেন, এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘না। ওরা পড়াশোনা করছে। মানুষের মতো মানুষ করবো।’

জানা যায়, শুধু শূকর পালক বা কর্মচারীরাই নয়, শূকরগুলোর জীবনচক্রও পথে পথেই। পথেই জন্ম, পথেই বেড়ে ওঠা আবার পথেই বিক্রি হয় শূকর। প্রতিটির বয়স ও আকার ভেদে দুই থেকে দশ হাজার টাকা করে বিক্রি হয় এবং মা শূকরগুলো বছরে দুইবার সাত/আটটা করে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি এলাকায় দুই থেকে তিনদিন অবস্থান করা হয়। পরে আবার খাবারের সন্ধানে অন্য কোন এলাকায় ছুটে চলা হয়।

পরিবেশ রক্ষায় শূকরের ভূমিকা, শহর ও গ্রামের শুকনো ময়লা জলাশয় ও ঝোপঝাড়ে ময়লা ও আগাছা খেয়ে থাকে শূকর। জমে থাকা ময়লা আবর্জনা গুলো খেয়ে পরিস্কার করে। এতে দূষণ থেকে রক্ষা হয় প্রকৃতি ও পরিবেশ।

Scroll to Top