প্রায় প্রতিটি আমদানিকৃত পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির পর থেকে মার্কিন সরকার যে রেকর্ড শুল্ক রাজস্ব আদায় করছে তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়মিত গর্ব করে যাচ্ছেন। তবে এখন আলোচনায় এই বিশাল অঙ্কের আয়কৃত অর্থ কোন কাজে ব্যয় করছে সরকার।
রোববার (৯ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে জুলাইয়ের তুলনায় এক মাসের ব্যবধানে শুল্ক বিভাগে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪২ শতাংশ।
গত সপ্তাহের শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমাদের কাছে প্রচুর অর্থ আসছে, যা দেশটি কখনও দেখেনি। গত যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাচ্ছি আমরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প যথার্থই বলেছেন। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের মতে, গত মাসে মার্কিন সরকার প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক রাজস্ব আদায় করেছে। যা গত জুলাইয়ের তুলনায় ২৪২% শুল্ক রাজস্ব বৃদ্ধি।
ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিল থেকে অর্থ্যাৎ যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় সমস্ত পণ্যের উপর ১০% শুল্ক আরোপ শুরু করেন, পরে আরও বেশ কয়েকটি উচ্চতর শুল্কের মাধ্যমে, সরকার মোট ১০০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক রাজস্ব আদায় করেছে। যা গত বছরের একই চার মাসে সংগৃহীত পরিমাণের অন্তত তিনগুণ।
তাহলে সরকার এই অর্থ দিয়ে ঠিক কী করছে?
প্রেসিডেন্টের বক্তব্য এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের তথ্য প্রকাশের পর থেকে আলোচনায় এই বিশাল অঙ্কের আয়কৃত অর্থ কোন কাজে ব্যয় করছে সরকার।
ট্রাম্প প্রশাসন এই অর্থের ব্যয় সম্পর্কে দুটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছে, যার একটি সরকারের ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করা এবং অন্যটি মার্কিনিদের কাছে ‘শুল্ক ছাড়ের চেক’ পাঠানো।
শুল্ক বৃদ্ধির কারণ হিসেবে গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, আমি যা করছি তার উদ্দেশ্য মূলত ঋণ পরিশোধ করা, যা খুব বেশি পরিমাণে ঘটবে। কিন্তু আমার মনে হয় এমনও সম্ভাবনা রয়েছে যে, আমরা এত বেশি অর্থ নিচ্ছি যে আমরা মার্কিন জনগণের জন্য একটি লভ্যাংশ তৈরি করতে পারব।
যদিও প্রেসিডেন্টের বলা দুইটি পরিকল্পনার কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন দেখেনি দেশটির জনগণ। তাই অনেক মার্কিন নাগরিকের কাছে মনে হতে পারে যে, শুল্ক থেকে আসা কোটি কোটি ডলারে ধুলো জমাচ্ছে সরকার। কিন্তু পর্দার আড়ালে আরও অনেক কিছু চলছে।
সাধারণ কর বা শুল্কের মাধ্যমে সরকার যে রাজস্ব সংগ্রহ করে, তা ট্রেজারি বিভাগ দ্বারা পরিচালিত একটি সাধারণ তহবিলে যায়। ট্রেজারি সেই তহবিলকে ‘মার্কিন চেকবুক’ হিসাবে উল্লেখ করে। কারণ এটি সরকারের বিল পরিশোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
যখন সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে তা তার বিলের তুলনায় কম হয়, অর্থাৎ বাজেট ঘাটতিতে ভোগে, তখন এই পার্থক্য পূরণের জন্য তারা ঋণ নেয়। সরকার মোট ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পরিশোধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঋণ অনেক অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারা দাবি করছেন যে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলছে।
কারণ, এটি যেকোন মার্কিন ঋণের মতোই, সরকারকে ঋণের উপর সুদ দিতে হয়। সরকার যত বেশি ঋণ নেয়, তত বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়। আর এটি সরকারকে জনকল্যানমূলক বিনিয়োগের দিকে যেতে বাধা সৃষ্টি করে।