শুভ জন্মদিন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র

শুভ জন্মদিন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র

আহমেদ জামান শিমুল

আমাদের দেশে যখন যাত্রার ঢংয়ে অভিনয় করতো শিল্পীরা, ঝলমলে পোশাক পরে নিজেদের সিনেমার পর্দায় উপস্থাপন করতেন। এরকমই একইরকম সিনেমা দেখতে দেখতে দর্শকরা যখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তখন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-র মধ্য দিয়ে সালমান শাহর আগমন। প্রথম সিনেমা্য নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন— ন্যাচরাল অভিনয়, শিশুসুলভ নিষ্পাপ চেহারা; সবকিছু মিলিয়ে মানুষ তার ভিতর নতুনত্ব পেয়েছেন বলে সে সময়ে তার জনপ্রিয়তার শুরু হয়।

শুভ জন্মদিন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র

তিনি যে আর সকলের চেয়ে আলাদা তা জানান দিয়েছেন সাবলীল অভিনয়, শারীরিক সৌন্দর্য, ফ্যাশন সচেতনতা, পর্দায় নিজেকে উপস্থাপন— সবকিছু মিলিয়ে দর্শক তাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল। যার কারণে অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে সালমান শাহ মানুষের মনে দাগ কেটেছেন এবং চিরজীবনই এমনই থাকবেন।

সালমান শাহ আসলেই অন্যরকম একজন অভিনেতা, নায়ক বলতে যা বোঝায় আমরা সেটা তার চেহারায়, চলনে, বলনে এবং তার যে উপস্থাপন সিনেমায়— সবকিছুতে এরকম দেখেছি। বলা হয়, বাংলাদেশের সিনেমায় নায়ক রাজ রাজ্জাকের পর সালমান শাহ বাংলা চলচ্চিত্রকে ডমিনেট করতে পেরেছিলেন স্বল্প সময়ের চলচ্চিত্র জীবনে। এবং রাজ্জাকের পরে সালমানই অভিনয়ের একটা আলাদা ধরণ তৈরি করেছিলেন।

শুভ জন্মদিন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র

সালমান শাহ যে একজন স্টাইলিশ হিরো ছিলেন তা তার অভিব্যক্তিতে সবসময় প্রকাশ পেতো। সাধারণ গৃহিনী থেকে শুরু করে বাংলা সিনেমা দেখা লোকজন, ওনার সময়ের প্রত্যেকের কাছে উনি জনপ্রিয় ছিলেন।

উনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। আরেকটা বিষয়, সালমান শাহ, ওনার অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে ওনার যে অবস্থান তৈরি করেছেন, যে অবস্থানে উনি ছিলেন, একজন সুপারস্টার হিসেবে তার ভিতরে যে অহংবোধ থাকার কথা তা কখনই প্রকাশ করেন নাই। সবসময় সিনেমা জগতের একদম সাধারণ মানুষ থেকে শুরু সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতেন।

কেউ সামনে পরলে উনি আগেই সালাম দিতেন। মানুষকে সহজেই খুব আপন করে নিতে পারতেন, বন্ধুবৎসল স্বভাব তার ভিতর ছিলো। মানুষ হিসেবে খুব অসাধারণ ছিলেন। বিশেষ এফডিসিতে যারা গরীব, অসহায় ছিলেন, এমনকি অনেক সাধারণ মানুষকেও বিভিন্নভাবে উপকার করেছেন, সাহায্য করেছেন।

শুভ জন্মদিন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র

ব্যক্তি সালমান আর সিনেমার সালমান আলাদা কেউ ছিলো না। আমরা যেমন, সিনেমার পর্দায় তার অভিনয় দেখলে তাকে আলাদা কেউ মনে হত না, মনে হত আমার পাশের বাড়ির কেউ। যার কারণে মানুষ উনাকে সহজেই গ্রহণ করেছে।

উনার হাসি, মাথায় ব্যান্ড বাধা কিংবা গামছা বাধা— ‘সুজন সখী’র সুজন কিংবা ‘আনন্দ অশ্রু’র খসরু চরিত্রে তার অভিনয়, সবকিছু মিলিয়ে উনি মানুষের অন্তরে গেঁথে আছেন।

আগে মানুষ নায়ক-নায়িকাদের ভিউ কার্ড সংগ্রহ করতো। সেগুলো যখন এখনকার মানুষরা দেখে তারা আশ্চর্য হয়। একটা মানুষ কীভাবে এতটা নিখুঁত হয়। আমি ওনার ভিতরে কোনো খুঁত দেখি না।

শুভ জন্মদিন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র

এ প্রজন্মের তরুণদের কিন্তু সিনেমা হলে গিয়ে সালমান শাহের সিনেমা দেখার সুযোগ হয়নি। এদের বেশিরভাগই সালমানের ছবি দেখেছেন ইউটিউবে এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, অথবা টেলিভিশনে অথবা তার অভিনীত সিনেমার গানগুলো দেখেছেন— এগুলো দেখার পর তার প্রতি মানুষের যে আগ্রহ, তা অবিশ্বাস্য। এ প্রজন্মের অনেকে তার সিনেমা দেখে এবং তার ছবি ফেসবুক প্রোফাইল কিংবা কভারে দিয়ে রাখে। তার প্রতি মানুষের এ আগ্রহটা মানুষের সবসময়ই থাকবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ওনার প্রতি মানুষের এ ভালোবাসা থাকবে। সালমান শাহকে মানুষ মনে রাখবে, এটাই আসল বাস্তবতা।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হুট করে চলে না গেলে আজ তার বয়স হত ৫২। জন্মদিনে বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্রকে জানাই শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন সালমান শাহ।

সারাবাংলা/এজেডএস

Scroll to Top