শুধু ঘর নয়, এটি স্বপ্নপূরণের শুতিকাগার!

চট্টগ্রামের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে: ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন শারমীন আক্তার। স্বামী একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জিএম ছিলেন। কিন্তু ভালো বেসে বিয়ে করায় মেনেনিতে পারেনি শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারপরেও সবছিল ঠিকঠাক। হঠাৎ করে স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। দী্ঘ সাত বছর রোগ ভোগের পর আজ থেকে মাত্র ১৭ দিন আগে মারা যান স্বামী। এমনটাই বিলাপ করে বলছিলেন চট্টগ্রামের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া এক নারী।

বার্তা২৪. কমকে তিনি আক্ষেপ করে বলেন। আমি অনেক কষ্ট করে স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে কাপড় বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। শ্বশুরবাড়িতে জমি থাকার পরেও আমি ছিলাম ভুমি হীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘর পেয়ে তিনি। ও তার সন্তান খুশি। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে বড় কর্মকর্তা বানাবেন।


সোমবার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে ঘর প্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।

১৯৯১ সালে সন্তানসহ পরিবারের ৭ জন সদস্য হারিয়েছিলেন সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী এয়ার মোহাম্মদ (৬০)।  অনেক কষ্ট করে বড় মেয়ের বিয়ে দিলেও বাকি রয়েছে স্কুল পড়ুয়া মেয়ে। বিভিন্ন বেড়ীবাঁধে ঘর তুলে থাকা এই জেলে পরিবারটিও এখন স্বপ্ন বুনছে। মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে ভালো পরিবারে মেযেকে বিয়ে দেয়ার।

প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা করিয়ে ভালো করার স্বপ্ন বুনছেন বিলকিস আক্তার ও নিজাম উদ্দিন। চট্টগ্রামের বিভন্ন জায়গায় ছাপড়া দিয়ে থাকা এই পরিবারেরও আশ্রয় হচ্ছে চট্টগ্রামের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

 


বিলকিস আক্তার বলেন, স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন, বাসাভাড়া খাবর খরচ চালিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেন নি। এখন অন্তত বাসাভাড়ার টাকা দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাবেন।

দিনে বেচাবিক্রি হয় ২থেকে ৩ হাজার টাকা। সবকিছু বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৫-৬ শ টাকা। এক মাস হলো কিনেছেন দোকানের জন্য ফ্রিজও। বলছিলাম দেলোয়ার হোসেন ও জাহানারা বেগম দম্পতির কথা।

এই পরিবার থাকেন চট্টগ্রামের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ঘরের সামনেই চালান একটি টংদোকান স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই মিলে করেন দোকানদারী। গত তিনমাস ধরে তারা অনেকভালো আছেন। সরকার তাদোর থাকার জায়গা দেয়ায় স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানান।


প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত গৃহহীন আশ্রয়হীন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে আওয়ামীলীগ সরকার। এরই ধারাবাহীকতায় উপকূলীয় এলাকার ১৯ টি জেলায় দেয়া হচ্ছে ঘর।চট্টগ্রাম দেমের একটি অন্যতম দুর্যোগপ্রবন এলাকা। প্রায় প্রতিনিট প্রাকৃতিক দুর্যোগই হানাদেয় এখানে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ অঞ্চলের প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রায় ১০ লক্ষ ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে প্রায় ১ কোটি মানুষ নিঃস্ব হয়। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়,  আছড়ে পড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত দেম মধ্য এ পর্যন্ত ২৩০০ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। নতুন করে আরও ১৪০০ পরিবারকে ঘরদেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৩০ টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসেবে ঘর দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ৩২ টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোও ঈদের আগে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, দেশের ১৯ টি উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত গৃহ ও আশ্রয়হীন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহীকতায় তৃতীয় পর্যায়ে ৩২ হাজার ৯০৪ টি পরিবারকে দেয়া হচ্ছে জমিসহ ঘর।

Scroll to Top