শীতল অগ্নি

শীতল অগ্নি

যাই হোক, সত্যকে স্বীকার করার বদলে নমরুদ ধরে নিল তাকে অপমান করা হয়েছে। রাজা থেকে প্রজা সবাই একজোট হয়ে গেল—পূর্বপুরুষের ধর্মের বিরোধিতা ও দেবতাকে অসম্মানের দায়ে হজরত ইবরাহিমকে (আ.) আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। পোড়ানোর দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হলো। এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভীড় করল। চারদিকে হইহই রব পড়ে গেল, লোকজন প্রবল উৎসাহে লাকড়ি জোগাড় করতে লাগল। চারদিকে দেয়াল বানিয়ে অগ্নিকুণ্ড বানানো হলো। কিন্তু হজরত ইবরাহিমের (আ.) মনে কোনো ভয় ছিল না, তিনি ছিলেন একদম শান্ত। কারণ তিনি জানেন আল্লাহ-তাআলাই একমাত্র সহায়ক, তিনি যদি হেফাজত করতে চান তবে কারুর সাধ্য নাই তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করার।

নমরুদ একটি চড়কায় করে হজরত ইবরাহিমকে (আ.) সেই আগুনে নিক্ষেপ করল। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। ঠিক ওই মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা আগুনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগুন, তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৬৯)

অমনি আগুন ঠান্ডা ও আরামদায়ক হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমি অগ্নিকুণ্ডে অবস্থাকালীন যে আরাম-আয়েশ পেয়েছিলাম, জীবনে আর কোনো দিনও তা পাইনি। ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ডে ৭দিন অবস্থান করেন, কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেন ৪০দিন। যতদিনই হোক, এ ছিল এক আশ্চর্য ঘটনা। আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখান।

কয়েকদিন বাদে নমরুদ আগুনে উঁকি মেরে ইবরাহিমকে (আ.) নিরুদ্বিগ্ন দেখতে পেয়ে সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। সে ইবরাহিমকে (আ.) আগুন থেকে বের হয়ে আসতে বলে। তিনি বের হয়ে এলে নমরুদ বলল, ইবরাহিম, তোমার খোদা তো অনেক শক্তিশালী, আমি তার নামে চার হাজার গরু কোরবানি করব। ইবরাহিম (আ.) বললেন, কুফরি অবস্থায় আপনার কোরবানি কবুল হবে না, আপনাকে প্রথমে ঈমান গ্রহণ করতে হবে। নমরুদ বলল, আমি তো আমার রাজত্ব ছাড়তে পারব না। এরপর সে সত্যি সত্যিই ৪,০০০ গরু জবাই করেছিল। (সীরাত বিশ্বকোষ, ১/৩৪৩-৩৪৪, ইফাবা)

নমরুদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট বিবরণ নেই। অনেকে বলেন, তার নাকের ছিদ্র দিয়ে একটি মশা ঢুকে গিয়ে মস্তিষ্কে উৎপাত করতে শুরু করে। সে হাতুড়ি দিয়ে ক্রমাগত নিজের মাথায় আঘাত করত। এভাবেই তার মৃত্যু হয়। (তাফসীরে তাবারী, ৫/৫৫, ইফাবা)

Scroll to Top