বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘সেরা সিলি পয়েন্ট ফিল্ডার’ তকমাটা শাহাদাত হোসেন দিপুর নামে পাশে লিখে দিলে অবাক হওয়ার বদলে ‘সহমত’ই জানাবে অনেকে। সিলেটে অভিষেক টেস্টে দিপুর ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা হয়নি। তবে দিপু তার নামের সুবাস চায়ের শহরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ঠিকই। সিলি পয়েন্ট কিংবা শর্ট লেগে হেলমেট মাথায় দাঁড়িয়ে দিপু খালি হাতে লুফে নেন নাটকীয় ৩ ক্যাচ। এরপর ঢাকায় এসে অবাক করে দেন কেন উইলিয়ামসনকে। সিলেট থেকে মিরপুর; রাজার মতোই যেন এই দুই পজিশনে রাজত্ব চালাচ্ছেন শাহাদাত হোসেন দিপু।
সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডের দুই ইনিংসে সিলি পয়েন্ট এরিয়ায় দাঁড়িয়ে মোট ৩ টি ক্যাচ নেন শাহাদাত হোসেন দিপু। দুই ইনিংসেই দিপুর নাটকীয় ক্যাচের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে হয় কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়েকে। সিলি পয়েন্ট এবং ফরওয়ার্ড শর্ট লেগ; এই জায়গাগুলোতে দক্ষ, ধৈর্যশীল ফিল্ডারদেরই ফিল্ডিং করা উচিত। দিপু-ই হয়ে উঠছেন অধিনায়কের প্রথম পছন্দ। রাজিন সালেহ’র পর মুমিনুল হক, জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয় এই জায়গাতে দিপুর আগে ছিলেন ভরসা হয়ে। দিপু এসে পজিশন করলেন আরও শক্ত।
সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১ম টেস্টে জাতীয় দলের ১০২তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ঘটে শাহাদাত হোসেন দিপুর। দেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুমিনুল হকের কাছ থেকে বিশেষ টেস্ট ক্যাপ বুঝে নেন। মিডল অর্ডারের এই ব্যাটার ব্যাট হাতে অভিষেকের দুই ইনিংসেই হন ব্যর্থ। ব্যাটিং টেকনিক দিপু দেখাতে পারলেও ফিল্ডিংয়ে বেশিই নজর কারেন। মুগ্ধতা ঝরেছিল উইকেটের আশে-পাশে ফিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দিপুর কাছ থেকে।
স্পেশালিষ্ট “সিলি পয়েন্ট” ফিল্ডার হিসাবে আবির্ভাব হয় ‘৭৮’ নম্বর জার্সি গায়ে থাকা এক ক্রিকেটারের। দুই ইনিংস মিলিয়ে একে একে নেন দুর্দান্ত ৩ ক্যাচ। যার মাঝে প্রায় সবগুলোই ছিলো ড্রামাটিক। সিলেট টেস্টে ব্যাটার দিপু চাইতে অভিষেক টেস্টে স্পেশালিষ্ট “সিলি পয়েন্ট” ফিল্ডার দিপু বেশি নজর কেড়েছে। এর আগে সিলি পয়েন্টে এত ভালো ধারাবিক ফিল্ডিং বাংলাদেশের কোনো ফিল্ডারের থেকে দেখা যায়নি।
যেভাবে শাহাদাত হোসেন দিপু সিলেট থেকে ঢাকায় কিউই ব্যাটারদের বিপদ ঘটালেন-
ডেভন কনওয়ে, সিলি পয়েন্ট (প্রথম ইনিংস, সিলেট টেস্ট)
অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করে হালকা ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি রক্ষণাত্মকভাবে খেলেন কনওয়ে। বল তার ব্যাটের ভেতরের কানায় ছুঁয়ে প্যাডে লেগে চলে যায় সিলি পয়েন্টে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দারুণ ক্যাচ নেন অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দিপু। এই উইকেটে অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দিপুর কৃতিত্বও কম নয়। সিলি পয়েন্টে তার চমৎকার ক্যাচেই যে ড্রেসিং রুমে ফিরতে হয়েছে কনওয়েকে।
ইশ সোধি, শর্ট লেগ (প্রথম ইনিংস, সিলেট টেস্ট)
রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা ইশ সোধির ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়ে নুরুল হাসান সোহানের পায়ে লেগে বল চলে যায় শর্ট লেগে থাকা শাহাদাত হোসেনের সামনে। সামনে ঝুঁকে দারুণ ক্যাচ নেন অভিষিক্ত তরুণ।
ডেভন কনওয়ে, শর্ট লেগ (দ্বিতীয় ইনিংস, সিলেট টেস্ট)
তাইজুলের বলে শর্ট লেগে শাহাদাতের তালুবন্দি হন তিনি। অনেকক্ষণ ক্রিজে ছিলেন কনওয়ে। কিন্তু ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। আউটসাইড অফের বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটে-বলে এক হয়নি। বল ব্যাটে লেগে যায় শর্ট লেগে দাঁড়ানো শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে।
কেন উইলিয়ামসন, শর্ট লেগ (প্রথম ইনিংস, ঢাকা টেস্ট)
ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে কেন উইলিয়ামসনকে দ্রুত ফেরাতে বড় কৃতিত্ব শাহাদাত হোসেন দিপুর। মিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে হালকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি উইলিয়ামসনের ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে যায় শর্ট লেগের দিকে। ডান দিকে এক হাত বাড়িয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন শাহাদাত। দারুণ রিফ্লেক্স। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ভরসা কেন উইলিয়ামসন তাকিয়ে থাকেন অবিশ্বাস ভরা চোখে।
এভাবেই দুরন্ত শাহাদাত হোসেন দিপুর রাজত্ব চলছে সিলি পয়েন্ট আর শর্ট লেগে। যা বাংলাদেশকে এনে দিচ্ছে স্বস্তির হাওয়া। যে হাওয়ায় ভেসে-বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ দল।