শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে বই উৎসবে তাহসিন

শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে বই উৎসবে তাহসিন

মরিয়ম আক্তার আরিয়ার বয়স পাঁচ বছর পার হয়েছে কদিন আগেই। আরিয়ার মুখের বুলি ফোটার সঙ্গে সঙ্গে মা তাকে ‘অ-আ’ শিখিয়েছেন। তবে স্কুল, নতুন বই, সহপাঠী এসব যেন আরিয়ার জীবনে প্রথম!

কিছুদিন আগেই স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে আরিয়া। সেই থেকে অপেক্ষায় ছিল, কবে নতুন বই পাবে, কবে যাবে স্কুলে? পহেলা জানুয়ারি চলে এল আরিয়ার বহুল প্রতিক্ষার সেই দিন। এই দিনে যে স্কুলে বসেছিল বই উৎসব। সেই উৎসবে বাবার হাত ধরে এসেছিল আরিয়া, পেল প্রথম বইও।

সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হওয়া মেয়ে আরিয়াকে নিয়ে স্কুলে আসা বাবা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কথা হলে এসব জানান তিনি। এসময় দেখা যায়, নতুন বই পেয়ে ঘরে পৌঁছানোর আগে স্কুলের পাশে একটি টমটম গাড়িতে বসে মেয়েকে দেওয়া নতুন বই খুলে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে এদিক-ওদিক দেখাচ্ছিলেন বাবা মোহাম্মদ আলী।

শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে বই উৎসবে তাহসিন
মেয়েকে নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখাচ্ছেন বাবা


মোহাম্মদ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবছর প্রথম আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। এর আগে তার মা তাকে ঘরে বিভিন্ন বর্ণমালা শিখিয়েছে। আজকে স্কুলে বই দেবে শুনে সকাল থেকে আমাকে তাড়া দিচ্ছে কবে স্কুল থেকে বই আনবে। আমাকেও সঙ্গে যেতে হবে। তাই আজকে কাজে না গিয়ে মেয়ের সঙ্গে স্কুলে আসলাম। আজকে তার প্রথম স্কুলে আসা, নতুন বই পাওয়াও প্রথম। ঘরে যাওয়ার আগে বই দেখবে কি কি আছে, ভেতরে এসব দেখবে। কি আর করা, মেয়ের আনন্দে আমিও আনন্দিত। বই খুলে খুলে দেখাচ্ছি।’

মেয়েকে নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখাচ্ছেন বাবা


আর আরিয়া বলল, ‘এত বড় বই আগে পাইনি। নতুন নতুন বই পেয়ে খুশি লাগছে। বাবা আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। আজকে রাত থেকে আমি পড়া শুরু করব।’

নতুন বই পেয়ে শুধু ছোট্ট আরিয়াই আনন্দিত নয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিকের সর্ব শিক্ষার্থীরাই যেন উচ্ছ্বসিত। তাদের মধ্যে আরেকজন রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা। অনুভূতি জানতে চাইলে সে বার্তা২৪.কম-কে বলে, ‘অনেক খুশি লাগছে। নতুন ক্যারিকুলামের বই পেয়েছি। কেমন হবে সেটি দেখার আগ্রহ অনেকদিন ধরে। আজকে হাতে পেয়েছি। বই ভালোভাবে যত্ন নেব, মনোযোগ দিয়ে পড়ব।’

 

নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, মাতল শিশু প্রাণ


বছরের প্রথমদিনে বই উৎসবকে ঘিরে দিনভর উচ্ছ্বাস ছিল নগরীর প্রতিটি স্কুলে। শিশুদের বাঁধ ভাঙা আনন্দ ছুঁয়ে গেছে তাদের অভিভাবকদের। তারা বলছেন, বছরের প্রথম দিনে সন্তানের এমন আনন্দমাখা মুখ দেখে তারাও খুশি।

আরিফ হোসেন নামের এক অভিভাবক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিনামূল্যে সবগুলো বই একসঙ্গে দিয়েছে এটা আসলেই আনন্দের বিষয়। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এটি একটি কষ্টের কাজ। একদিনে একসাথে এতগুলো বই দেওয়া এত সহজ না। এতদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় তারা একটু বেড়াতে পারছে। এখন আবার পড়া শুরু করবে। তবে নতুন কারিকুলাম হওয়ায় বুঝতে একটু সময় লাগবে।’

নগরীতে আলাদাভাবে বই উৎসব পালন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। আনন্দঘন আয়োজনে তারা বই তুলে দেয় শিক্ষার্থীদের হাতে।

ছবি: বার্তা২৪.কম


চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এবার নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯০টি পেয়েছি। আর ইংরেজি ভার্সনের জন্য আমাদের চাহিদা ছিল ৮৩ হাজার ৮৫০ টি। আমরা সেটিও পেয়েছি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া ১ হাজার ৮১০টি বই পেয়েছি। মোট চাহিদা অনুযায়ী ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার বই আমরা পেয়েছি। আজকে এসব বই আনুষ্ঠানিকভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’

তবে এবার মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলামের কারণে ২০ শতাংশ বই এখনো আসেনি। কয়েকদিনের মধ্যে তাও পৌঁছাবে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, `মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম হওয়ায় এ দুটি শ্রেণির বই পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমরা মোট ৮০ শতাংশ বই পেয়েছি। যাক আজকে উৎসবের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি। আশা করছি, বাকি ২০ শতাংশ বই কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে।’

Scroll to Top