শচীন টেন্ডুলকার হবেন না নরী কন্ট্রাক্টর?

শচীন টেন্ডুলকার হবেন না নরী কন্ট্রাক্টর?

কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলী, ঘোড়ার দৌড়, নৌকা বাইচ, গোল্লাছুট, চার গুটি, লাঠিখেলা, লংজাম্প, মোরগ যুদ্ধ, হাডুডু, ঘুড়ি উড়ানো, স্কুল সেট, বদন, বৌছি, এলোন্টি-বেলোন্টি, লুডু খেলা, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফ পানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, ষোল গুটি, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, বটি বটি, দাপ্পা, রস-কস, চারগুটি, চেয়ার সিটিং।

বর্তমান আধুনিক যুগের ছেলে মেয়েদের কাছে এ ধরনের খেলাধুলা একেবারেই নিত্য নতুন মনে হতে পারে। তবে এক দশক আগেও এই খেলাগুলোতেই শৈশবকাল পার করেছেন গ্রাম বাংলার তরুণরা। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তরুণরা এখন এতটাই মোবাইল বা ইন্টারনেটে আসক্ত তারা এই খেলাগুলো কখনো খেলেনি। অনেকে এই সকল খেলার নামও শোনেনি। আর শুনবেই বা কেমন করে তারা তো ছোট থেকে বড় হচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেট টিভি এইসব আধুনিক প্রযুক্তি দেখে। তাদের এখন আনন্দের মাধ্যম হয়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার লাইক কমেন্ট। এই খেলাগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়েছেন উদ্যোগ। সে ক্ষেত্রে সময় পেলেই ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে কলেজ মাঠে বদন, বৌছি, এলোন্টি-বেলোন্টি খেলায় মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী কলেজ মাঠে এমন চিত্র দেখা যায়।

শচীন টেন্ডুলকার হবেন না নরী কন্ট্রাক্টর?
গ্রামীণ খেলায় মেতেছে শিক্ষার্থীরা


ক্রীড়াবিদরা বলছেন, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে আমাদের চারপাশের চিত্র। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বর্তমান সময় উঠেছে অনেকটাই যান্ত্রিক। মোবাইল গেমসের কারণে এখন আর বিকেলে মাঠে দেখা যায় না কিশোর-কিশোরীদের। মোবাইল গেমস ও উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রামীণ খেলাধূলার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে না অনেকে। এমতাবস্থায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো। এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য এসব গ্রামীণ খেলাধুলা তো করেই না, নাম জানে কিনা সেটি এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এক সময় এ সমস্ত খেলাধুলাকে বাদ দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্যের পূর্ণতাকে কল্পনাও করা যেত না। বর্তমানে এসব ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার প্রচলন না থাকায় গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের বাঙালী’র ঐতিহ্য।

রাজশাহী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম ফেরদৌস সহপাঠীদের সঙ্গে কলেজ মাঠে বদন খেলছিলেন। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিশ্ব পেয়েছে অনেক নতুন নতুন আবিষ্কার আর নতুন নতুন উদ্ভাবন। এরকম আধুনিক সংস্কৃতিতে পুরনো সংস্কৃতি মনে রাখাটাই দুষ্কর। কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা এসবের নামই জানেন না। তবে এইসব খেলার মধ্যে রয়েছে এক অন্যরকমের প্রশান্তি। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমাদের এই খেলাধুলার আয়োজন।

ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন , অনেক দিন পর কলেজে এসে এই শীতের সকালে বন্ধুদের সাথে বদন খেলাধুলা করছি। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। এ সব খেলা আর বেশি দেখায় যায় না।

একই বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, গ্রামীণ এসব খেলাধুলা হলো বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। যা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। এসব খেলাধুলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করতো। বর্তমানে গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান প্রযুক্তির সুবিধা ও এর ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তখন কেন পিছিয়ে থাকবে আমাদের প্রাণের খেলাগুলো? আমাদের সবার একটু চেষ্টাই পারে নতুন প্রজন্মকে এসব খেলার সঙ্গে পরিচিত করাতে। যা আমাদের ইতিহাস আর শিকড়কে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী একটা মাধ্যম।

গ্রামীণ খেলায় মেতেছে শিক্ষার্থীরা


কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে এ সকল পুরনো সংস্কৃতির খেলাকে মনে করে দেওয়ার যে মহৎ উদ্যোগ শিক্ষার্থীরা নিয়েছেন এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। নতুন প্রজন্ম মোবাইলে অযথা সময় নষ্ট না করে তাদের এই সকল খেলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

রাজশহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই গ্রাম থেকে উঠে আসা। সেজন্য তারা রাজশাহী শহরে আসার পর খেলাধুলার মাঠ পায় না। যখন তারা কলেজে আসে তখন কলেজের মাঠে বিভিন্ন রকম গ্রাম বাংলার খেলায় মেতে উঠে। তাদের এই খেলা দেখে কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরাই উদ্বুদ্ধ হয়। তারাও গ্রামের কোনো কোনো খেলা খেলে। এটা খুব দারুণ বিষয়। এই খেলাধুলা ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। একজন শিক্ষার্থী খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকলে মাদকাসক্ত থেকে বিরত থাকে।

তিনি আরো বলেন, এ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাম বাংলার বিভিন্ন খেলার ইভেন্টকে মাথায় রেখে অনেক ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এ জন্য আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধুবাদ জানাই। মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা ও গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে সচেতন ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন উদ্যোগ বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

Scroll to Top