ক’দিন আগেই বিশ্বখ্যাত ফিলিপিনো চলচ্চিত্র নির্মাতা লাভ ডিয়াজ নিজের আসন্ন সিনেমা ‘ম্যাগেলান’ নিয়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার অনুসারীরা ধরেই নিয়েছিলেন, আসন্ন ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে নতুন সিনেমাটির প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে! আর সেটাই সত্যি হচ্ছে।
আসন্ন কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে প্রিমিয়ার হতে চলেছে ‘ম্যাগেলান’। যে সিনেমায় পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফার্দিনান্দ ম্যাগেলানের চরিত্রে অভিনয় করছেন মেক্সিকান জনপ্রিয় অভিনেতা গায়েল গার্সিয়া বার্নাল!
লাভ ডিয়াজের ‘ম্যাগেলান’-এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেলস এজেন্সি লাক্সবক্স। সদ্যই এই এজেন্সি জানিয়েছে, লাভ ডিয়াজের ‘ম্যাগেলান’ চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘প্রিমিয়ার’ বিভাগে বিশ্বপ্রিমিয়ার করবে।
১৬শ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘ম্যাগেলান’। এতে একজন তরুণ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী পর্তুগিজ নাবিক ম্যাগেলানের জীবন অনুসরণ করা হয়েছে, যিনি পর্তুগালের রাজাকে অমান্য করে বিশ্ব আবিষ্কারের স্বপ্নে এগিয়ে যান। পরে তিনি স্পেনের রাজপরিবারকে তার দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য সমর্থন করতে রাজি করান।
তবে এই যাত্রা ছিল অত্যন্ত ক্লান্তিকর—ক্ষুধা, বিদ্রোহ এবং মানসিক চাপ দলকে ভেঙে দিতে থাকে। মালয় দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর পর ম্যাগেলানের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়; তিনি জয় ও ধর্মান্তর নিয়ে বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যা শেষ পর্যন্ত সহিংস বিদ্রোহের জন্ম দেয় এবং তা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পরিচালক লাভ ডিয়াজকে নিয়ে পর্তুগিজ প্রযোজক জোয়াকিম সাপিনহো বলেন, “লাভ ডিয়াজ ম্যাগেলান ও ফিলিপাইনের মধ্যকার সেই প্রথম সাক্ষাৎকে অনন্য এক দৃষ্টিকোণ থেকে চিত্রায়িত করেছেন। আর গায়েল গার্সিয়া বার্নাল আমাদের মানব প্রকৃতির গভীর রহস্যের পথে নিয়ে যান। তারা মিলে সিনেমায় এক নতুন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার জন্ম দিয়েছেন।”
সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছে আন্ডারগ্রাউন ফিল্মস (স্পেন), ব্ল্যাক ক্যাপ পিকচার্স (ফিলিপাইন), টেন১৭পি (ফিলিপাইন), এল ভিয়াজে ফিল্মস (স্পেন), ভোলস ফিল্মস (তাইওয়ান), লিব ফিল্মস (ফ্রান্স) এবং একেপি২১ (ফ্রান্স)।
লাক্সবক্স টিমের পক্ষ থেকে ফিওরেলা মোরেত্তি বলেন, “লাভ ডিয়াজের মতো সমসাময়িক সিনেমার একজন দুঃসাহসী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে কাজ করতে পারা আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। ম্যাগেলান একটি মহাকাব্যিক ইতিহাসের চিত্রায়ন, যা গায়েল গার্সিয়া বার্নালের অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে প্রাণ পেয়েছে। এই গল্পটি, যা বৈশ্বিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, আগে কখনও ফিলিপিনোর দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়নি — লাভ ডিয়াজ সেটিই করেছেন গভীরতা, কবিতা ও জরুরি বার্তার সাথে।”
দীর্ঘ সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যই বেশী পরিচিত লাভ ডিয়াজ। তার কোনো কোনো ছবি চার ঘণ্টা, কোনোটা ৫ ঘণ্টা বা তারচেয়ে বেশী। তার কাছে সিনেমা মানেই ধৈর্য এবং অনুভব! তার বিখ্যাত দীর্ঘ সিনেমা হল ‘হেরেমিয়াস’, যার দৈর্ঘ্য ৫১৯ মিনিট! এছাড়া ‘ডেথ ইন দ্য ল্যান্ড অব এনকান্তস’ এর দৈর্ঘ্য ৫৪১ মিনিট এবং ‘ইভ্যুলুশন অব ফিলিপিনো ফ্যামিলি’ এর দৈর্ঘ্য ৬২৪ মিনিট!
এর আগে ‘দ্য ওমেন হু লেফ্ট’ চলচ্চিত্রটির জন্য ২০১৬ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন লায়ন এবং ‘ফ্রম হোয়াট ইজ বিফোর’ এর জন্য ২০১৪ সালে লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন লেপার্ড পুরস্কার জিতেছিলেন লাভ ডিয়াজ। আঁ সার্তে রিগাসহ একাধিকবার কানেও তার ছবি প্রদর্শীত হয়েছে। –ভ্যারাইটি