ঢাকা, ১০ জুন – অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে শুরুতে কঠোর অবস্থানে থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের কৌশল কিছুটা নরম করতে পারে বিএনপি। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর দাবি, দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপেই এই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।
গত শনিবার (৭ জুন) ঈদের রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেখানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচনায় খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে দেন, সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে কৌশলগতভাবে সংলাপ ও আলোচনার পথেই অগ্রসর হওয়াই এখন দলের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত।
চেয়ারপারসনের এই পরামর্শের পর সোমবার (৯ জুন) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠক ও দলীয় কৌশল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
দলীয় নেতাদের মতে, বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসবে মঙ্গলবার (১০ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের সময় ও স্থান চূড়ান্ত করেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, “বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করবে।” তবে বৈঠকটি বাস্তবায়িত হবে কি না, তা লন্ডনে পৌঁছার পরই স্পষ্ট হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৬ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস ঘোষণা করেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণায় বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, আবহাওয়া ও রমজান মাসের কারণে এপ্রিলের নির্বাচন বাস্তবসম্মত নয়। তারা জানতে চায়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয় কেন—এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।
ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের সম্ভাবনার খবর প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির মধ্যে এখন আলোচনা-সমঝোতার কৌশলের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে এনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে যাওয়ার চিন্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক হতে পারে দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আলোচনায় নির্বাচনকালীন সরকার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের রূপরেখা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, চার দিনের সরকারি সফরে গত সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দেশে উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য এই বৈঠক শুধু রাজনৈতিক সংঘাত নয়, বরং সমঝোতার বার্তাই দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আলোচনার ফল যদি বিশ্বাসযোগ্য ও সমাধানমুখী হয়, তবে তা বিএনপির কৌশলগত জয়ের পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক ধারার জন্যও হতে পারে এক ইতিবাচক দিকচিহ্ন।