কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির আয় ও ব্যয়ের অনুপাত ‘অপারেটিং রেশিও’ দিয়ে নির্ধারণ করা যায়। এর মাধ্যমে রেলব্যবস্থা কতটা দক্ষ ও লাভজনক, তা বোঝা যায়। অপারেটিং রেশিও মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট ব্যয়কে মোট আয় দিয়ে ভাগ করা। অপারেটিং রেশিও যত বেশি হবে, ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন দক্ষতা তত দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হয়।
আয়-ব্যয়ের অনুপাতের ক্ষেত্রে রেল দৈনন্দিন কাজে মূলত যে ব্যয় করে, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে বেতন-ভাতা, অবসরে যাওয়া কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধা, জ্বালানি খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। রেলের আয়ের উৎস মূলত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন। এর বাইরে নিজেদের ভূমি ইজারা দিয়ে কিছু আয় করে থাকে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেলের পরিচালন খাতে প্রতিবছর কমবেশি ১০ শতাংশ হারে ব্যয় বেড়েছে। সে তুলনায় আয় বাড়ছে গড়ে ৫ শতাংশের কম। রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিমেন্ট, সার, পাট, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য আয় করে আসছিল। ধীরে ধীরে এসব পণ্যের পরিবহন কমছে। পণ্য পরিবহন বাড়ানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই ছিল বিদেশি ঋণ। এর মধ্যে পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথ (রেললিংক), চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের ঋণের সুদসহ কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি অবশ্য অপারেটিং রেশিওতে বিবেচনায় নেওয়া হয় না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আয়-ব্যয়ের এই নেতিবাচক ফারাক দিনের পর দিন বহন করা রাষ্ট্রের জন্য কঠিন। এর প্রতিকার খুঁজে বের করতেই হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রেললাইন, ইঞ্জিন-কোচ কেনা হয়েছে বিপুল টাকায়। এগুলো আগামী দিনে পুরোনো হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বাড়বে। তখন আয়-ব্যয়ের ফারাক আরও বাড়তে পারে।