সিলেট থেকে: সবশেষ ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুয়ে, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই। পরের তিন দেখায় তিনটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রায় চার বছর পর টেস্টে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়ে সাড়ে ৬ বছরের জয়খরা কাটাল রোডেশিয়ানরা, সেই সিলেটের মাটিতেই। শান্তদের হারিয়ে একটি রেকর্ডও গড়েছে জিম্বাবুয়ে। তাদের সবচেয়ে বেশি রানতাড়া করে টেস্টে জয় এটি, এর আগে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬২ রান করে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। টসে জিতে আগে ব্যাটে নেমে ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। জবাবে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ২৭৩ রান তোলে। ৮২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ২৫৫ রানে থামে। ১৭৪ রানের লক্ষ্য দেয় সফরকারীদের। জবাবে ৫০.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে জিম্বাবুয়ে।
চার বছর পর টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে। এরআগে ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল তারা। পরের ১০টি টেস্টে জয় দেখেনি দলটি।
বুধবার সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে রানতাড়ায় নেমে সফরকারীদের ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন। উদ্বোধনী জুটিতে ৯৫ রান তোলেন দুজনে। বেন কারেন ৪৪ রানে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। নিক ওয়েলচ ও শন উইলিয়ামস ফিরে যান আলো ছড়ানোর আগেই। দলীয় ১২৮ রানে ব্রায়ান বেনেট ফিরে যান ৫৪ রান করে।
পরে আরও তিন ব্যাটারকে হারায় জিম্বাবুয়ে। ক্রেইগ আরভিন ১০ রান এবং মায়াভো ১ রান ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ১২ রান করে ফিরে যান। রিচার্ড এনগারাভাকে নিয়ে রোডেশিয়ানদের জয়ের বন্দরে পৌঁছান ওয়েসলি মাধেভেরে। মাধেভেরে ১৯ রানে এবং এনগারাভা ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মিরাজ ৫টি এবং তাইজুল ২টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিলেন মিরাজ, ম্যাচে নিলেন ১০ উইকেট। টেস্টে ৫২তম ম্যাচে এসে ২০০ উইকেটের দেখা পেলেন টাইগার অফস্পিনার। টেস্টে ইনিংসে ১২বার ৫ বা ততোধিক উইকেট ও ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩বার ১০ বা ততোধিক উইকেটের দেখা পেলেন তিনি।
এর আগে তৃতীয় দিনে চা বিরতির পর দ্বিতীয় ইনিংসে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতে ওপেনার সাদমান ফিরে যান। ১ উইকেটে ৫৭ রান তুলে দিন শেষ করে টিম টাইগার্স। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে।
বৃষ্টি বাধা কাটিয়ে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে নির্ধারিত সময়ের তিনঘণ্টা পর দুপুর একটায় খেলা শুরু হয়। দিনের ষষ্ঠ ওভারে মাহমুদুল হাসান জয় ফিরে যান। ৩৩ রান করেন এ ওপেনার। তৃতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে ৬৫ রান যোগ করেন মুমিনুল। ১৩৮ রানে মুমিনুল ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৪৭ রান করেন তিনি।
এরপর মুশফিকুর রহিম ব্যাটে নেমে আবারও হতাশ করেন। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ৪ রানে ফিরে গেছেন। মুশফিক ফেরার পর চা বিরতিতে যায় দুদল। বিরতির পর জাকের-শান্ত মিলে যোগ করেন ৩৯ রান।
৪ উইকেটে ১৯৪ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি বাধা পেরিয়ে বুধবার চতুর্থ দিন দুপুর এগারোটায় গড়ায় খেলা। দিনের শুরুতেই ফিরে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬০ রান করেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামও দ্রুত ফেরেন। হাসান মাহমুদকে নিয়ে লিড দেড়শ পার করেন জাকের আলি। ফিফটি তুলে নেন।
৭৮তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। হাসান ও খালেদকে ফেরান। পরে জাকের স্কোর বড় করার চেষ্টা করেন। ৭৯.২ ওভারে মুজারাবানির ষষ্ঠ শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। ৫৮ রান করেন জাকের। হাসান মাহমুদ ১২ রান এবং মিরাজ ১১ রান করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে রোডেশিয়ানদের ব্লেসিং মুজারাবানি ৬ উইকেট নেন। ওয়েলিংটন মাসাকাদজা নেন দুটি উইকেট। ভিক্টর নিয়াউচি ও রিচার্ড এনগারাভা একটি করে উইকেট নেন।
রোববার সিলেট টেস্টের প্রথমদিনে ব্যাটে নেমে ধস দেখে বাংলাদেশ। ৬১ ওভারে ১৯১ রানে করে থামে টিম টাইগার্স। মুমিনুল ৫৬ রান এবং শান্ত ৪০ রান করেন। বাকিদের মধ্যে জাকের ২৮ রান এবং হাসান মাহমুদ ১৯ রান করেন।
প্রথম ইনিংসে রোডেশিয়ানদের হয়ে ওয়েলিংটন মাসকাদজা ও ব্লেসিং মুজারাবানি ৩টি করে উইকেট নেন। ওয়েসলি মাধেভেরে ও ভিক্টর নিয়াউচি নেন ২টি করে উইকেট।
জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে ২৭৩ রানে থামায় বাংলাদেশ। শন উইলিয়ামস ৫৯ রান এবং ব্রায়ান বেনেট ৫৭ রান করেন। নায়াশা মায়াভো ৩৫ রান এবং ওয়েসলি মাধেভেরের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান। শেষদিকে রিচার্ড এনগারাভা ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ ৫টি এবং নাহিদ রানা ৩ উইকেট নেন। হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ নেন একটি করে উইকেট।