রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে বিএনপি সচেতনভাবে সামনে এগোচ্ছে – DesheBideshe

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে বিএনপি সচেতনভাবে সামনে এগোচ্ছে – DesheBideshe

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে বিএনপি সচেতনভাবে সামনে এগোচ্ছে – DesheBideshe

ঢাকা, ২৮ জুলাই – রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনে বিএনপি সচেতনভাবে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা অত্যন্ত সচেতন। জনগণের যেটা প্রয়োজন এবং যুগের সঙ্গে যে পরিবর্তনগুলো আনা দরকার, রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেতন। সচেতনভাবেই আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি।

গতকাল রবিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে ‘ফারাক্কা ব্যারাজ ও বাংলাদেশের সংকট : পদ্মা ব্যারাজ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর আবশ্যিকতা নিয়ে আরেকটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী শহিদুল ইমাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ পাইলট তৌকির ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকাল অনেকে অনেক কথা বলছেন, সংস্কার হচ্ছে। সংস্কারের বিষয়ে আমরা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছি। ২০১৬ সালে আমরা প্রথম ভিশন-২০৩০ দিয়েছি। সেখানে সমস্ত পরিবর্তনের কথা, সংস্কারের কথা প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন।

২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এইটুকু বুঝি যে আমার দেশের মানুষের পালস আমি বুঝি। আমার দেশের মানুষ ওপরে উঠতে চায়, উন্নতি চায়, একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়; এবং সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কিন্তু সমস্ত বিষয়ের সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাকে এগিয়ে নিতে হবে।

জাতীয় ঐক্যকে সামনে নিয়ে আমরা যদি সবাই আমাদের মূল বিষয়গুলো সামনে আনতে পারি, সেগুলো নিয়ে যদি কাজ করি, নিঃসন্দেহে আমরা সফল হব।’

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর বিষয়ে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা পদ্মা ব্যারাজ ও পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ সাতবার সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ফারাক্কা ব্যারাজ বা ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে শুধু ফরিদপুর বা রাজবাড়ীর সমস্যা নয়; এটা পুরো দক্ষিণাঞ্চলের সমস্যা। আমাদের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে তাদের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হবে। সেটা যে সরকারই আসুক তাদের বলতে হবে, এটা আমরা চাই। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অনেক আগেই কমিটমেন্ট।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ, কেউ বলে ৩৭ শতাংশ মানুষ-জমি প্রকটভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সবাই বুঝি কী হয়েছে? আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে, ৩০ বছরের যে গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল, সেটি আগামী বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কি কেউ আলোচনা শুনেছেন, এই চুক্তিকে আগামী দিনে আমরা কী ধরনের দর-কষাকষি করে আমার পক্ষে রাখার চেষ্টা করব? সেটার কারিগরি এবং অন্যান্য ধরনের আলোচনা আমি শুনতে পাই না।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘গঙ্গা ব্যারাজ না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভবিষ্যৎ খুব খারাপ অবস্থায় যাবে। আপনারা নিজের দেশটাকে কতটুকু জানেন? জানেন না। সাতক্ষীরা-খুলনা-বাগেরহাট-বরগুনার দক্ষিণাংশে এরই মধ্যে জনসংখ্যা গ্রোথ ইজ নেগেটিভ। মানুষ ওখান থেকে পালাচ্ছে! কারণ সেটা বসবাসযোগ্য নেই। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়টা যোগ করলে, ৩০-৪০ বছরে ওই অংশগুলো বসবাসযোগ্য থাকবে না। কাজেই এখন থেকে যদি চিন্তা করতে হয়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাংশকে পানি দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু ওহার মো. হাফিজুল হক, ব্র্যাকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল হান্নান চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর হোসেন খান জালাল প্রমুখ।

সূত্র: কালের কণ্ঠ
এনএন/ ২৮ জুলাই ২০২৫



Scroll to Top