রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির একযুগ | চ্যানেল আই অনলাইন

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির একযুগ | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

আজ রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ ভবনধসের ঘটনা এখনও যেন দগদগে ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে আহত এবং নিহতদের স্বজনদের মনে। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১,১৩৮ জন শ্রমিক, আহত ও নিখোঁজ হয়েছিলেন সহস্রাধিক মানুষ। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে, চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ কিংবা পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা তাদের হতাশ করেছে।

ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের কেউ লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছেন, কেউ মানসিক যন্ত্রণায় কষ্টে দিন পার করছেন। গার্মেন্টস কর্মী জেসমিন ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিলেন দুই দিন। তাকে উদ্ধার করেন এক অচেনা ব্যক্তি। এখনও সেই স্মৃতি তার ঘুম কেড়ে নেয়। জেসমিন বললেন, দোষীদের বিচার দেখে মরতে চাই।

বরিশালের শীলা বেগম মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন সাভারে, স্বপ্ন ছিল ভালো জীবনের। কিন্তু ইথার টেক্স কারখানায় কাজ করতে গিয়ে ভবনের নিচে চাপা পড়েন। ১৮ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হলেও শারীরিক জটিলতা থেকে যায়। এখন তিনি টিউমারে আক্রান্ত, অপারেশনের প্রয়োজন হলেও অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। মেয়ের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসে দায়ের হওয়া ১১টি শ্রম (ফৌজদারি) মামলা এখনও ঢাকার দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর্যায়ে রয়েছে, চারটি মামলার নোটিশ এখনও পত্রিকায় প্রকাশের অপেক্ষায় এবং বাকি তিনটি মামলার কজলিস্ট হালনাগাদ হয়নি।

দায়রা আদালতে থাকা তিনটি মামলার একটি হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত, বাকি দুটি মামলায় ৯৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১৯ মে।

যেখানে একসময় শহিদবেদি ছিল, এখন সেখানে চলছে মাদকসেবীদের আড্ডা। জায়গাটি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই ট্র্যাজিক জায়গাটি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা অভিযোগ করেছে, বিগত সরকার আমলে শ্রদ্ধা জানাতে এলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) জানিয়েছে, শ্রম আইনে নিহতদের জন্য নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ অপ্রতুল। নিহতদের জন্য ২ লাখ এবং আহতদের জন্য আড়াই লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ আন্তর্জাতিক মান, ভবিষ্যৎ আয়, চিকিৎসা ও মানসিক চাপের তুলনায় অপর্যাপ্ত।

১২ বছর পেরিয়ে গেলেও রানা প্লাজার ঘটনার দায়সারা বিচার ও পুনর্বাসনের অভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন আজও বিষাদময়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও ন্যায়বিচার না পেলে এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় থেকে শিক্ষার আশা করা দুরূহ। রানা প্লাজা যেন কেবল একটি ট্র্যাজেডি না হয়ে থাকে—হোক ন্যায়ের প্রতীক।

Scroll to Top