রাজধানীসহ ১৭ জেলায় ঝোড়ো বৃষ্টির আভাস

রাজধানীসহ ১৭ জেলায় ঝোড়ো বৃষ্টির আভাস

‘তুমি টাকা দাও আমরা রিপোর্ট পরিবর্তন করে দিব। রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে। আর তোমার ছেলেকেও পুলিশ গ্রেফতার করবে না। চয়ন (এসআই) লাইগা আছে তোমার ছেলেকে ধরার জন্য। র‌্যাব যাইয়া তোমার ছেলেরে ধইরা নিয়ে আসবে। রিপোর্ট আসলে তখন ওই মেয়ের সঙ্গেও বইসা লাভ নাই। তুমি বুঝো না মেয়ে কেমন বাটপার। মেয়ের সাথে বসতে চাইলে মেয়ে যদি ৫ লাখ চায় তখন ওইটাই দিতে হবে।’

পুলিশ ও আসামি পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ১৬.৩৫ মিনিট ও ২৪.৩৭ মিনিটের দুটি রেকর্ড এসেছে বার্তা২৪.কমের হাতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই রেকর্ডের কথোপকথনটি ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিব শাহা, মোহাম্মদপুর থানার এসআই পবিত্র মন্ডল এবং ধর্ষণ অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামি কিশোর আকাশের (ছদ্মনাম) মা আসমা বেগমের। আলোচনার এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা বাদী নাবালিকা। এই ঘটনার নেপথ্যে হৃদয় নামের পুলিশের এক সোর্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও উঠে আসে তিনজনের আলোচনায় ।

অভিযোগ উঠেছে, মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা সাজিয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোর আকাশকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছেন ডিএমপির তিন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিরুদ্ধে। তবে টাকা আদায়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কিশোরকে গ্রেফতার ও তার মায়ের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

মামলা ও গ্রেফতারের নামে হয়রানি করা কর্মকর্তারা হলেন- মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক চয়ন, পবিত্র মন্ডল ও শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক রাজিব শাহা। এস আই রাজিব শাহা কয়েক দিন আগে মোহাম্মদপুর থানা থেকে শিল্পাঞ্চল থানায় বদলি হয়েছেন।

মামলার নেপথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকার একটি স্কুলের দশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশার (ছদ্মনাম) সঙ্গে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশ (ছদ্মনাম) নামের এক কিশোরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুইজনেই অপ্রাপ্তবয়ষ্ক। বার্তা২৪.কমের হাতে আসা দুজনের জন্ম নিবন্ধনে কিশোরের বয়স ১৫ বছর আর মামলার বাদী ছাত্রীর বয়স ১৭ বছর ৯ মাস। এমন কি মামলার বাদীর বয়স নিশ্চিত হতে স্কুলে জমা দেওয়া জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির রেজিস্ট্রেশন যাচাই করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০০৬ সালে মার্চ মাসে জন্ম এই কিশোরীর। তবে বার্তা২৪.কমের হাতে আসা মামলার নথিতে মেয়ের বয়স ১৮ আর ছেলের বয়স ১৯ দেখিয়েছে থানা পুলিশ। এ দিকে বুধবার সকাল থেকেই মামলা বাদী মাইশাকে মোহাম্মদপুর থানায় দিনভর দৌঁড়ঝাপ করেছেন। এ সময় অভিযুক্ত এসআইসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গেও কথা বলতে দেখা গেছে এই কিশোরীকে।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মোহাম্মদপুর এলাকায় মামলার বাদী কিশোরী মাইশার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মাইশা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কিছু দিন আগে আকাশের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়। এই বিষয়টি আমার এক বান্ধবীকে বলি। এরপর সে আমার সঙ্গে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) চয়নের সোর্স হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর হৃদয় আমাকে দিয়ে থানায় একটি অভিযোগ দেওয়ায়। ওইদিনেই এসআই চয়ন আমাকে নিয়ে ওই ছেলের বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে ছেলের মাকে বিষয়টি জানালে ছেলের মা আমার কথা শুনে আমাকে মেনে নিতে রাজি হয়। পরে আমি অভিযোগ উঠিয়ে নিতে চাইলে পুলিশ সেটা করতে দেয়নি। মেডিকেল টেস্টের নাম করে আমাকে ওইদিন সারা রাত থানায় আটক করে রাখে। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও ছাড়েনি। সকালে আমাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে টেস্ট করানোর পরে ছাড়ে। পরে শুনি আমার অভিযোগটি মামলা হয়ে গেছে। এমন কি টাকা আদায়ের চেষ্টা বিষয়টিও আমি পরে জেনেছি।

এ দিকে কিশোরী মাইশার মামলায় কিশোর আকাশকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে আটক করতে তার বাসায় যান এসআই পবিত্র ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এই সময়ে আসামি আকাশের মাকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে আকাশের মা আসমা বেগম বলেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে এসআই পবিত্র আমার বেডরুমে হঠাৎ প্রবেশ করে। এই সময়ে বাসায় থাকা নারীরা অপ্রস্তুত থাকায় এসআই পবিত্রকে বেড রুম থেকে বের হতে বলি। কিন্তু তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। বারবার বেড রুম থেকে বের হতে অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত না করে আমাদের ভিডিও করতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। এই সময়ে পবিত্রের সঙ্গে আসা এক আনসার সদস্য আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ভিডিও ফুটেজও বার্তা২৪.কমের হাতে আছে।

আসমা আরও বলেন, তারা আমার রুমের দরজা ভেঙে ফেলেছে। আমার কাছে এসআই রাজিব ও এসআই পবিত্র সমঝোতার জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করে। এস আই রাজিব আমার সাথে এই বিষয়ে একাধিকবার দেখা করে। আমি টাকা না দেওয়ার আমার ছেলের নামে মিথ্যা মামলা করায়। মামলার পরেও তারা সমঝোতার জন্য টাকা দাবি করে। টাকা দিলে মেয়ের মেডিকেল রিপোর্ট ঘুরিয়ে দেবে বলেও আশ্বাস দেয়। না হলে আমার ছেলেকে গ্রেফতার করার হুমকি দেওয়া হয়। পরে গত রাতে আমার বাসায় ঢুকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুহুরি মহল্লা  এলাকায় মোহাম্মদপুর থানার এসআই চয়নের সোর্স হিসেবে পরিচিত হৃদয় প্রথমে বিষয়টি চয়নকে জানায়। পরে মামলা হওয়ার আগেই চয়ন ওই মেয়েকে নিয়ে ওই কিশোরের বাসায় গিয়ে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেন। সেসময় মেয়ের মা রাজি না হওয়ার তারা ফিরে এসে মেয়েকে দিয়ে থানায় অভিযোগ করান। এরপরও ওই কিশোরের মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে সমঝোতার নামে একাধিকবার দেখা করে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। এই চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদপুর থানার এসআই চয়ন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর চয়নের হয়ে সমঝোতা করেন এসআই রাজিব। আর তদন্তের নামে বাসাবাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দেন এসআই পবিত্র।

রাজধানীসহ ১৭ জেলায় ঝোড়ো বৃষ্টির আভাস
ছবি: চয়নের সোর্স হৃদয়


জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক এসআই চয়ন বলেন, ‘আসলে এই ধরনের কোনো ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। আর ওইটা আমার এলাকাও না। আর ওই মামলার তদন্ত্ত কর্মকর্তা এসআই পবিত্র মন্ডল। আপনার এলাকা না হলে মামলা হওয়ার আগে ওই কিশোরের বাড়িতে আপনি কেন গিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে চয়ন বলেন, ‘আমি প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক তদন্তের পর বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে আর ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে এসআই পবিত্র মন্ডল। এরপর ওই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সোর্সের বিষয়ে জিগ্যেস করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই রাজিব শাহা বলেন, ‘আসলে ওই কণ্ঠটি আমার নয়। আমি টাকা পয়সার বিষয়ে কোনো কথা বলি নাই। আর আমি এখন মোহাম্মদপুর নাই, আমি এখন তেজগাঁও শিল্পাঞ্জলে। 

তাহলে গতকাল (মঙ্গলবার) আপনি ওই কিশোরের মায়ের সঙ্গে দেখা করছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজিব শাহা বলেন, ‘ওই মহিলা আমার পূর্বপরিচিত। ওই মহিলা ফোন দিয়ে আমার কাছে হেল্প চাইছিল। বলছে তার ছেলের নামে একটি মামলা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি তাকে হেল্প করতে গেছিলাম। তবে টাকা পয়সার বিষয়ে তার সাথে আমার কোনো কথা হয় নাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পবিত্র মন্ডলকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নাই। এরপর ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর না দেওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

অপ্রাপ্ত কিশোরীর অভিযোগে মামলা দায়ের ও তিন এসআইয়ের টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভুঞা বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।’

ঘটনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কে কি বলল- দেখা যায়, অভিযোগ করার পরে বাদি-বিবাদীর সাথে আপোস-মিমাংষা হয়ে যায়। পরে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলতে পারে। এগুলো ভিত্তিহীন কথাবার্তা। এগুলো কতখানি সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে।’

Scroll to Top