কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘সাংগ্রাই জল উৎসব’ বা ‘জলকেলি’ উৎসব শুরু হয়েছে। এই উৎসবটি রাখাইনদের নববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের তিন দিন পর, অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়।
এবারও ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এই জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ টহল দিচ্ছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তাবল থাকবে পুরো কক্সবাজারের রাখাইন পল্লীগুলোতে।
প্রতিবছরের মতো এবারও রাখাইন সম্প্রদায়ের পুরানো রাখাইন বর্ষকে বিদায় ও নতুন রাখাইন বা মগী সনকে বরণ করতে ‘সাংগ্রাইং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব উদযাপন করে থাকে। এর অংশ হিসেবে এবারও ১৬ এপ্রিল বৌদ্ধ স্নানের মাধ্যমে বর্ষবরণের এই উৎসব শুরু হয়। উৎসবে মাতোয়ারা রাখাইন সম্প্রদায়। এ উৎসব উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।
রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা অধ্যক্ষ ক্যথিং অং জানান, কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, রামু, চৌফলদণ্ডী, হারবাঙসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৪০টি মণ্ডপে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এউৎসবে স্থানীয় রাখাইনদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষও অংশগ্রহণ করেন, যা উৎসবটিকে একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত করেছে। আমরা মঙ্গলজল ছিটিয়ে পুরানো বছরকে বিদায় ও নতুন রাখাইন বর্ষকে স্বাগত জানাই, যুগ যুগ ধরে আমরা এটি পালন করে আসছি।
‘সাংগ্রাইং’ উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো জলকেলি, যা রাখাইন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ান এবং একে অপরকে জল ছিটিয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। এ উৎসবের মাধ্যমে পুরাতন বছরের সকল গ্লানি ও দুঃখ দূর করে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।
মণ্ডপে আসা মালা রাখাইন বলেন, এটি আমাদের বাৎসরিক একটি মিলনমেলা, আমরা একে অপরের সাথে জল ছিটিয়ে আনন্দ বিনিময় করি। মঙ্গল কামনা করি।
কবি কামরুল হাসান বলেন, এই জলকেলি উৎসব শুধু রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও এতে অংশগ্রহণ করেন। এটি একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন।
উৎসবের সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়, যা এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে আরও সমৃদ্ধ করে। এই উৎসবের মাধ্যমে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উদযাপন করে এবং নতুন বছরের আগমনকে আনন্দের সাথে বরণ করে।
এই উৎসব দেখার জন্য অনেক পর্যটকও রাখাইন পল্লীগুলোতে ভিড় করেন। খুলনার ডুমুরিয়া থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটক রহিম আফরোজ বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের এই উৎসব দেখতে আমরা কক্সবাজার শহরের বড়বাজার রাখাইন পল্লীতে এসেছি। তাদের এই উৎসব দেখে আমরা অনেক আনন্দ পেয়েছি।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সাজ্জাদ, রফিক, আসলাম, মহিমা ও আফ্রিদি বলেন, রাখাইনদের উৎসব দেখে আমরা অনেক মজা পেয়েছি। এবারের কক্সবাজার ট্যুরে আমাদের জন্য এটা ছিল বাড়তি পাওয়া।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শাহিন বলেন, এই উৎসবটি রাখাইন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ। উৎসবের শান্তিপূর্ণ পরিবেশনিশ্চিত করতে কক্সবাজার জেলা পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।