রমজানের মাগফিরাতের ১০ দিন ক্ষমা লাভের সুবর্ণ সুযোগ | চ্যানেল আই অনলাইন

রমজানের মাগফিরাতের ১০ দিন ক্ষমা লাভের সুবর্ণ সুযোগ | চ্যানেল আই অনলাইন

রমজান মাস হলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এটি আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ, যা বান্দার জন্য গুনাহ মাফ ও জান্নাতের পথে ফিরে আসার সোনালি সুযোগ এনে দেয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— “রমজানের প্রথম অংশ রহমত, মধ্যবর্তী অংশ মাগফিরাত এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য।” (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ১৫৭৭)

এর মধ্যে মাগফিরাতের দশদিন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি পাপমোচনের শ্রেষ্ঠ সময়। মহান আল্লাহ তাঁর অশেষ দয়ায় এই সময়ে বান্দাকে ক্ষমা করেন, যদি সে আন্তরিকভাবে তাওবা করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে।রমজানের এই বিশেষ দিনগুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও আমল করলে আমরা গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে গুনাহ থেকে আমাদের ক্ষমা লাভের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো—

১. আন্তরিক তাওবা:

আল্লাহর কাছে খাঁটি অন্তরে তওবা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।তাওবা হলো গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

কুরআনে বলা হয়েছে—

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।” (সুরা আল-বাকারা: ২২২)

২. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা:

আল্লাহর দরবারে বারবার ইস্তিগফার করা গুনাহ মোচনের অন্যতম কার্যকর মাধ্যম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

“যে ব্যক্তি ইস্তিগফারকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করে, আল্লাহ তার সব সংকটের সমাধান দেন, দুঃখ দূর করেন এবং অবিশ্বাস্য উপায়ে রিজিক দেন।” (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৮)

৩. তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়:

রমজানে রাতের ইবাদতের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। বিশেষত তাহাজ্জুদ নামাজের সময় আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া খুবই কার্যকর।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

“রাতের সালাতের মধ্যে এমন এক সময় আছে, যখন একজন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা তাকে দিয়ে দেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৫৭)

তারাবিহ নামাজও রমজানের একটি বিশেষ আমল, যা গুনাহ মোচনের মাধ্যম।

হাদিস শরিফে এসেছে—

“যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ) আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭)

৪. অন্যদের ক্ষমা করা:

আমাদের উচিত নিজে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও ক্ষমা করা।  কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন—”তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুক?” (সুরা আন-নূর: ২২)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— “যে ব্যক্তি অন্যের ভুল ক্ষমা করে, আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৮)

৫. দান-সদকাহ করা:

সদকাহ গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম।  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— “সদকাহ গুনাহ মোচন করে, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।” (তিরমিজি, হাদিস: ৬১৪)

সুতরাং, আমাদের উচিত এই সময়ে দান-সদকাহ বৃদ্ধি করা, গরীব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো এবং মানবতার সেবা করা।

রমজানের এই মাগফিরাতের দশ দিন আল্লাহর অফুরন্ত করুণার বার্তা নিয়ে আসে। যারা আন্তরিকভাবে তাওবা করে, আল্লাহ তাদের সব পাপ ক্ষমা করে দেন।

এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের উচিত ইবাদত-বন্দেগি বৃদ্ধি করা, ইস্তিগফার করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতের পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Scroll to Top