ধর্ম ডেস্ক : রমজান ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বরকতময় মাস, যেখানে মুসলমানদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে এবং কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্ত কল্যাণ ও রহমতে ভরপুর। মহান আল্লাহ এই মাসকে এতটাই মর্যাদা দিয়েছেন যে, তিনি জান্নাতের দরজা খুলে দেন এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন।
রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
১. গুনাহ মাফ ও জান্নাত লাভের সুযোগ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি: ১৯০১, সহিহ মুসলিম: ১১৫৫)
রমজান এমন একটি মাস, যেখানে প্রতিটি নেক আমল বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। এটি আল্লাহর অনুগ্রহের মাস, যেখানে আল্লাহ বান্দাদের অগণিত সওয়াব দান করেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
২. লাইলাতুল কদরের বরকত
রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল কদর। এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের নির্দেশক্রমে প্রত্যেক বিষয়ে অবতীর্ণ হন। শান্তি বর্ষিত হয় ফজরের উদয় পর্যন্ত।” (সূরা আল-কদর: ৩-৫)
রাসুল (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইখলাসের সাথে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি: ২০১৪, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)
৩. জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়
নবী (সা.) বলেছেন: “যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৯, সহিহ মুসলিম: ১০৭৯)
৪. রোজাদারের দোয়া কবুল হয়
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনোই প্রত্যাখ্যান করা হয় না: (১) ন্যায়পরায়ণ শাসকের, (২) রোজাদারের ইফতারের সময়, (৩) মজলুমের দোয়া।” (তিরমিজি: ২৫২৬)
রমজানে করণীয় ইবাদত
১. কুরআন তেলাওয়াত
রমজান কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাস। আল্লাহ বলেন: “রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসেবে।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
২. বেশি বেশি নফল ইবাদত ও দান-সদকা
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে দানশীল ব্যক্তি, কিন্তু রমজানে তার দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন: “রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে দানশীল মানুষ এবং রমজানে তিনি বাতাসের মতো দ্রুত দান করতেন।” (সহিহ বুখারি: ৬)
৩. তারাবিহ নামাজ ও ইতেকাফ
তারাবিহ নামাজ: রমজানের রাতের অন্যতম বড় ইবাদত হল তারাবিহ নামাজ, যা রাসুল (সা.) এবং তার সাহাবারা নিয়মিত আদায় করতেন।
ইতিকাফ: রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নত। এতে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করে।
রমজানের দোয়া ও ইফতারের দোয়া
১. রমজানে বেশি বেশি পড়ার দোয়া
ওহ God শ্বর, আপনি একজন সাধারণ ক্ষমা যা ক্ষমা পছন্দ করেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করুন।) (তিরমিজি: ৩৫১৩)
২. ইফতারের দোয়া
ওহ God শ্বর, আপনি নীরব, এবং আপনি আপনার জীবিকা নির্বাহে বিশ্বাসী।
“আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলা রিজক্বিকা আফতারতু।” (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, তোমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তোমার প্রদত্ত রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।) (আবু দাউদ: ২৩৫৮)
রমজান মাস আমাদের জন্য এক মহান নিয়ামত ও কল্যাণের মাস। এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং দান-সদকা করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের বরকতপূর্ণ সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন, আমিন।