টরন্টো, ০৬ নভেম্বর – পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হলেন সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরী। সেই সাথে নগরীতে এক ইতিহাস রচিত হলো। ঘটনাটি অভূতপূর্ব। এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেনি। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির এমন সম্মিলন কোথাও বড় একটা দেখা যায় না।
আমার বিশ্বাস, এই অসম্ভবকে সম্ভব করার কারনে টরন্টোর বাঙালিরা যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। নানান ব্যানারে এ নগরীতে আমরা বহু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। কোনোটা ছিল সম্মিলিত, কোনোটা ছিল সর্বজনীন কিন্তু বাস্তবে কোনোটাই না ছিল সম্মিলিত, না ছিল সর্বজনীন; এই প্রথম দেখা গেলো কবি আসাদ চৌধুরীকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতে সমবেত হয়েছিলেন টরন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ।
উপস্থিত হয়েছিলেন কবি, লেখক, সংগীত শিল্পী, নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পী, নাট্যশিল্পী, বাচিক শিল্পী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ সহ কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। সম্মিলিত একটি আয়োজন, সর্বজনীন একটি উদ্যোগ, সত্যিকারের একটি নাগরিক স্মরণ সভা।
রবিবার, ৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় কবি দিলারা হাফিজ-এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। বক্তব্য রাখেন আয়োজকদের পক্ষ থেকে আহমেদ হোসেন ও দেলওয়ার এলাহী। এরপর সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করার জন্য ফারহানা পল্লবকে মঞ্চে আহবান জানানো হয়।
শ্রদ্ধা জ্ঞাপনঃ
এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে প্রয়াত কবিকে শ্রদ্ধা জানানোর পর ছিল বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। পবিত্র গীতা পাঠ করেন শ্যামল ভট্টাচার্য, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন অপূর্ব বড়ুয়া, পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন মৌ হৈমন্তী কোরাইয়া এবং মোনাজাত করেন শমসের আলী হেলাল।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানঃ
তপন সাইয়েদ ও সহশিল্পীদের পরিবেশনায় সূচনা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়। অংশগ্রহণ করেন- সৈয়দা রোকসানা বেগম, সঙ্গীতা মুখার্জি, সুমি বর্মণ, ইলোরা বড়ুয়া, বিন্দু চৌধুরী, অনুশ্রী বড়ুয়া, মুনিরা সুলতানা মিলি, সুমন সাইয়েদ, সুমন মালিক, অরুনা হায়দার, ফরিদা হক, শাহীন মাহবুবুর রহমান, জুলফিয়া আহমেদ ইন্টু, মৈত্রেয়ী দেবী, ইভা নাগ, শ্যামল মাহমুদ, আশরাফুল বারী মঞ্জু, রিফাত নূর শান্তা, মমতাজ মমতা, ফারহানা শান্তা, গৌরি দাস, সাবরিনা, অর্চনা সাহা, ঝুম্পা চক্রবর্তী, অনন্ত নির্ঝর, তানজীর আলম রাজীব , জাহিদ হোসেন, ফারহানা খান টিনা, শিরিন চৌধুরী, সোহানা, ফিয়োনা, বিদিতা, ও নুজহাত।
কবিতা আবৃত্তিঃ
এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন ফ্লোরা শূচি ডি রোজারিও। শুরুতে কবি আসাদ চৌধুরী : তাঁর সময় ও কবিতা নিয়ে কথা বলেন কবি তুষার গায়েন।
কবি আসাদ চৌধুরীর কবিতা ‘নদীর জলে আগুন ছিল’ আবৃত্তি করে বাচনিকের সদস্যরা একই সাথে নৃত্যের যুগলবন্দী নিয়ে আসেন সুলতানা হায়দার, অরুনা হায়দার, বিপ্লব কর ও তাপস দেব।
এরপর একে একে একক আবৃত্তি করতে মঞ্চে আসেন- ফারহানা আহমেদ, জ্যাকুলিন ডি রোজারিও, আসমা হক, অনুরাগ আহমেদ, ফ্লোরা নাসরিন ইভা, এলিনা মিতা, সুমন মালিক, মুনিরা সুলতানা মিলি, নাজমা কাজী, আনিসা রশীদ লাকি, রাশেদা মুনীর, শেখর গোমেজ, মেরী রাশেদীন, মেহরাব রহমান ও লিজা গালীব।
স্মৃতিচারণঃ
এ পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন সেলিনা সিদ্দিকী শুশু। স্মৃতিচারণ করেন নাগরিক স্মরণ সভার সভাপতি কবি দিলারা হাফিজ, ড. তসলিমুর রহমান, নাসির উদদোজা, আমিন মিয়া, এনায়েত করিম বাবুল, সাহানা চৌধুরী, নওশের আলী, আসমা আহমেদ, মিনারা বেগম, মনির জামান রাজু, রেজা অনিরুদ্ধ, ফরিদা রহমান, হাসান মাহমুদ, তাসরিনা শিখা, জাহানারা আখতার, সুমন রহমান, মাহবুব চৌধুরী রনি, নজরুল মিন্টো, মঞ্জুর ই খোদা টরিক, শহিদুল ইসলাম মিন্টু, ফায়েজুল করিম, ইত্তেজা আহমেদ টিপু, সুমন সাইয়েদ, ড. বাদল ঘোষ, গোলাম মোস্তফা, মনির হোসেন বাবু, আশরাফ আলী, ফরিদা হক, কবি তনয়া শাঁওলী প্রমুখ।
সবশেষে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
আয়োজনে আরও যা যা ছিলঃ
ক) অনুষ্ঠানে কবির জামাতা বিশিষ্ট নির্মাতা নাদিম ইকবাল নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শণ করা হয়।
খ) অনুষ্ঠানস্থলে একটি শোকবই স্থাপন করা হয়। যেখানে কবিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অতিথিরা স্বাক্ষর করেন।
গ) পাশেই ছিল কবির একটি বিশাল পোট্ট্রেট যেখানে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিভিন্ন সংগঠন ও কবির ভক্তবৃন্দ।
ঘ) এছাড়া ছিল সংগ্রহে রাখার মতো কবির পেইন্টিং ও পোট্টেট।
ঙ)আরও ছিল আয়োজকদের পক্ষ থেকে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা।
চ)পুরো আয়োজনে অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবকদের শ্রম ও আন্তরিকতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর কবি আসাদ চৌধুরী টরন্টোর স্হানীয় একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।