পাকিস্তানি বিনোদন জগৎ এক কঠিন সময় পার করছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান অভিনেত্রী হুমায়রা আসগর ও আয়েশা খানের নিঃসঙ্গ মৃত্যু গোটা ইন্ডাস্ট্রিতে গভীর দাগ কেটে গেছে। তাদের মৃত্যু শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, বরং শিল্পীদের জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
হুমায়রা আসগর, যিনি প্রায় এক বছর ধরে সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন, অবশেষে করাচির একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ধারণা করছে, অন্তত ৯ মাস আগে তার মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি প্রাকৃতিক মৃত্যু বলে মনে হলেও, সাম্প্রতিক তদন্তে সম্ভাব্য ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ নিয়ে তদন্ত চলছে।
অন্যদিকে আয়েশা খান, যিনি একসময় পাকিস্তানের টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন, তিনিও নিজের ফ্ল্যাটে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। গেল মাসে প্রতিবেশীরা দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে তার মরদেহ আবিষ্কৃত হয়। পুলিশের ধারণা, উদ্ধারের অন্তত এক সপ্তাহ আগে তার মৃত্যু হয়।
এই দুই মৃত্যুই পাকিস্তানের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির এক করুণ বাস্তবতা তুলে ধরেছে—প্রবীণ ও কিছুটা প্রান্তিক শিল্পীদের প্রতি সমাজ ও সহকর্মীদের দৃষ্টি কতটা সীমিত হতে পারে, সেটাও যেন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে দায়িত্ববোধ ও একতার নতুন সূচনাও ঘটিয়েছে। একে একে গড়ে উঠছে সহায়তা কেন্দ্রিক উদ্যোগ, তৈরি হচ্ছে সংহতির পরিসর।
হুমায়রা ও আয়েশার করুণ মৃত্যু শিল্পীদের নিঃসঙ্গ যাপন নিয়ে প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। এই ঘটনাগুলোর পর পাকিস্তানি শোবিজ অঙ্গনে আত্মসচেতনতা ও সহমর্মিতা গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। ফয়সাল কুরেশি, হিনা বেয়াত, অতিকা ওধো, উমায়ের রানাসহ শীর্ষস্থানীয় তারকারা মিলে ‘এক্ট পাকিস্তান’ নামের সংগঠনের মাধ্যমে শিল্পীদের আর্থিক, স্বাস্থ্যগত ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে।
ফয়সাল কুরেশি বলেন, “আপনি যদি কোনো সমস্যায় থাকেন—অর্থনৈতিক, মানসিক বা শারীরিক—আমরা আছি, যোগাযোগ করুন। কেউ একা নন।” এই উদ্যোগের মাধ্যমে কোরআন খতম, সাহায্য ফান্ড গঠন, এবং শিল্পীদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
হুমায়রা আসগরের মৃত্যুর পর পাকিস্তানি অভিনেত্রী তুবা আনোয়ার এক নতুন উদ্যোগের কথা জানান—নারী শিল্পীদের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গঠন করেছেন। যার মূল লক্ষ্য মানসিক স্বাস্থ্য ও পারস্পরিক সহায়তা নিশ্চিত করা।
তুবা পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,“এই গ্রুপে আমরা খোলামেলা কথা বলি—মানসিক চাপ, পারিবারিক সমস্যা, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে। সপ্তাহে একদিন সবাই চেক-ইন করে কেমন আছি, জানাই।”
তিনি জানান, অনেক নারী শিল্পী, মেকআপ আর্টিস্ট, প্রোডাকশন স্টাফ রাজধানী ইসলামাবাদ বা লাহোর ছেড়ে করাচিতে এসে একাকী বসবাস করছেন—তাদের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত জরুরি।
অভিনেত্রী সোনিয়া হুসেইনও একটি ভিডিও বার্তায় বলেন,“হুমায়রার মৃত্যুর পর প্রথমবার মনে হলো আমরা একে অপরের দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজনে এক হতে পারি। একসাথে থাকার এই সিদ্ধান্ত দেরিতে হলেও সঠিক সময়ে এসেছে।”
শিল্পীজীবন যেমন গ্ল্যামারময়, তেমনি নিঃসঙ্গ ও অনিশ্চয়তায় ভরা। তবে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক দুই অভিনেত্রীর করুণ মৃত্যু শিল্পীদের মধ্যে এক নতুন ধরনের সংহতির জন্ম দিয়েছে। শিল্পীর জীবন রক্ষার এই উদ্যোগগুলো হয়তো হুমায়রাদের জন্য দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের বহু জীবন হয়তো বাঁচানো সম্ভব হবে, এমনটাই মনে করছেন পাকিস্তানের অপরাপর শিল্পীরা। টাইমস অব করাচি এবং দ্য কারেন্ট